হাথরসের ঘটনাস্থলে। —ছবি: এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া।
স্বঘোষিত ধর্মগুরুর ভক্ত ছিলেন না কোনও দিন। কিন্তু হঠাৎ সৎসঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা জাগল তাঁর। তার পর আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। বাবাকে খুঁজতে ঘটনাস্থলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন দুই পুত্র। মঙ্গলবার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় মৃত্যুর ছায়া ঘিরে ফেলেছে উত্তরপ্রদেশের হাথরসকে। হাসপাতালে থরে থরে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। বরফের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখা রয়েছে দেহগুলি। চারদিকে কান্নার আওয়াজ। প্রিয়জনদের হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন অনেকে। পিটিআই সূত্রে খবর, বুধবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন শতাধিক। এমনকি, বহু পুণ্যার্থীর খোঁজ পাওয়াও যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন অংশু কুমার এবং পবল কুমার। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে পিকআপ ভ্যান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘটনাস্থলের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁরা। অপেক্ষাই তাঁদের সঙ্গী। পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অংশু জানান, তাঁর বাবার জন্য ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করছেন তিনি। তাঁর বাবার নাম গোপাল সিংহ। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। সাক্ষাৎকারে অংশু বলেন, ‘‘আমার বাবা ভোলে বাবার ভক্ত ছিল না। হঠাৎ ইচ্ছা জেগেছিল সৎসঙ্গে যাওয়ার। আমরাও কোনও আপত্তি করলাম না। বাবা চেয়েছিল সৎসঙ্গে গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করতে। প্রথম এই ধরনের অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা হত তাঁর। কিন্তু বাড়ি ছে়ড়ে সেই যে বেরিয়ে গেল, এখনও ফিরে এল না।’’
এখনও পর্যন্ত গোপালের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানান অংশু। তিনি আদৌ বেঁচে রয়েছেন কি না, তা-ই জানেন না অংশু এবং পবল। খোঁজ নিতে কখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুর্ঘটনাস্থলে, কখনও আবার হাসপাতাল থেকে মর্গে ছোটাছুটি করছেন। অংশু বলেন, ‘‘আমার বাবা তেমন চালাকচতুর ছিল না। কখনও ফোনও ব্যবহার করেনি। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’’
ঘটনাস্থলে থাকা অন্য এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পর বাইরে বার হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বাইরে যাওয়ার পথে একটি বড় ড্রেন ছিল। তার উপর কাঠের পাটাতন দেওয়া হয়েছিল মাত্র। ভিড়ের চাপে সেই পাটাতন ভেঙে যায়। অনেকেই ড্রেনের মধ্যে পড়ে যান।’’ কেউ কেউ এই দুর্ঘটনার জন্য আয়োজকদের কাঠগড়ায় তুলছেন, কেউ আবার পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘এই দুর্ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানত এই সৎসঙ্গে এত ভিড় হবে। তার পরও ঠিক মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশকর্মীদের বরখাস্ত করুন।’’
বুধবার সকালেই এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তবে এফআইআরে স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবার নাম নেই। শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের আয়োজকদের নাম রয়েছে এফআইআরে। ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সেই মর্মে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। হাথরসের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আগরার অতিরিক্ত ডিজিপি। বুধবার সকালেই ধর্মীয় গুরুর আশ্রমে পৌঁছে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরাট দল। কিন্তু ধর্মগুরুর সন্ধান এখনও মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার ঘটনাস্থলে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের এক আধিকারিক সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া গিয়েছে।