অমৃতসর থেকে ২০ কিমি দূরে পঞ্জাবের দেবীদসপুরে রেললাইনে কৃষকদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই
নয়া কৃষি বিলের পক্ষে ব্যাট ধরে শুক্রবার ময়দানে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৃষকদের ‘বিভ্রান্ত’ করার অভিযোগ তুলে বিঁধেছিলেন বিরোধীদের। আশ্বাসও দিয়েছিলেন সেই সঙ্গে। কিন্তু তাতে কাজ হল না। পঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষক বিক্ষোভের পারদ ধীরে ধীরে চড়ছে। শনিবার সেই তালিকায় যোগ হল উত্তরপ্রদেশও।
নয়া কৃষি বিলের প্রতিবাদে শুক্রবার ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছিল দেশের কৃষক সংগঠনগুলি। প্রতিবাদের সেই ঝাঁঝটা বজায় রইল এ দিনও। অমৃতসরে রেললাইনের উপর বসে ‘রেল রোকো’ করছেন কৃষকরা। জামা খুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কর্মসূচির নেতৃত্বে কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ২৬ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত চলবে কর্মসূচি। কিন্তু এ দিন সংগঠনের সভাপতি সতনাম সিংহ পান্নু জানিয়ে দেন, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেল রোকো কর্মসূচি চলবে। গত বৃহস্পতিবার থেকে চলছে ‘রেল রোকো’। আন্দোলনের জেরে বিশেষ প্যাসেঞ্জার স্পেশ্যাল তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও কালকা, পিঞ্জোরে, রাইপুরানি এবং বারওয়ালা এলাকায় চলছে কৃষকদের বিক্ষোভ।
মোদী সরকারের কৃষি সংস্কারে ‘আপত্তি’ জানিয়ে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন এনডিএ-র অন্যতম পুরনো শরিক শিরোমণি অকালি দলের সাংসদ তথা পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্রবধূ হরসিমরত কউর বাদল। গত ১৭ সেপ্টেম্বরের চমকপ্রদ সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে কয়েকটি দিন। কিন্তু নয়া কৃষি বিল নিয়ে এখনও সে ভাবে মুখ খোলেনি অকালি দল। সে দিকে ইঙ্গিত করেই কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএস পান্ধের বলছেন, ‘‘অকালি দল দ্ব্যর্থহীন কোনও অবস্থান নিচ্ছে না। তারা জোটের শরিক হয়ে থাকতে চাইছে এবং রাজনীতি করছে।’’
ইলাহাবাদে কৃষকদের বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন: মাদক মামলায় জেরা দীপিকাকে, এনসিবি-র দফতরে অভিনেত্রী
কৃষি বিল নিয়ে সংসদের ভিতরে বাইরে সরব বিরোধী দলগুলি। সেই স্বরে গলা মিলিয়ে শুক্রবার রাহুল গাঁধী জানান, নয়া কৃষি বিল কৃষকদের ক্রীতদাসে পরিণত করবে। বিজেপির বিরুদ্ধে এমন হাতে গরম ইস্যুতে বিরোধিতার মেজাজ বজায় রাখতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব কংগ্রেস শিবির। ওই বিলগুলি নিয়ে জনমত গড়তে ইতিমধ্যেই ‘কৃষকদের পক্ষে বলুন’ (স্পিক আপ ফর ফার্মার্স) নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেস।
কৃষক বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও। মুজফ্ফরনগরে এ দিন বিক্ষোভ দেখান রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি)-এর কর্মী-সমর্থকরা। তবে অনুমতি ছাড়া বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগে সংগঠনের জেলা সভাপতি-সহ ৭০ জন আরএলডি কর্মী সমর্থককে আটক করা হয়েছে। এ দিন প্রয়াগরাজেও বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। বিল নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধিতার সুর শোনা গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গলাতেও। তাঁর মতে এই বিল ‘কৃষক বিরোধী’ এবং দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর ‘ভয়াবহতম আঘাত’। তাঁর মতে এই বিলের মাধ্যমে কেবলমাত্র লাভবান হবে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যবসায়ীরা।
নয়ডায় কৃষকদের বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন: ‘লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগী’, এ বার রাজ্যপালের খোঁচা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে
অল ইন্ডিয়া কিসান সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এআইকেএসসিসি)-র সঙ্গে যুক্ত ২৬৫টির বেশি কৃষক সংগঠন বিক্ষোভে নেমেছে এ দিনও। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনও। এআইকেএসসিসির সাধারণ সম্পাদক অভীক সাহা দাবি করেছেন, দেশ জুড়ে ২০ হাজার জায়গায় তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এ দিন।