ছবি: পিটিআই।
প্রবল ঠান্ডায় জবুথবু রাজধানীর উপকণ্ঠে কৃষক আন্দোলনের উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। আজ দিল্লি-গাজিয়াবাদ সীমানায় উত্তরপ্রদেশের রামপুর জেলার এক কৃষকের আত্মহত্যার খবর সামনে এসেছে। অন্য দিকে, আজ প্রথম দিল্লি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার পক্ষ থেকে আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসে তেরঙ্গা
পতাকা জড়িয়ে দিল্লি যাত্রার আওয়াজ তোলা হয়েছে। নিজেদের দাবিতে অনড় কৃষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, আগামী ৪ তারিখের আলোচনায় সরকার তিনটি কৃষি আইন সম্পূর্ণ খারিজ করার সিদ্ধান্ত না নিলে, এই আন্দোলন চলবে।
ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (বিকেইউ)-এর দাবি, আন্দোলনস্থলের একটি শৌচাগার থেকে আন্দোলনরত কৃষক কাশ্মীর সিংহ লাদি (৭৫)-র দেহ উদ্ধার হয়েছে। পাশে একটি সুইসাইড নোটও মিলেছে। তাতে কৃষি আইনের বিরোধিতার কথা উল্লেখ করে তাঁর মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন লাদি। আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি, উদ্ধার হওয়া ওই নোটে লেখা রয়েছে, ‘আর কত দিন ঠান্ডায় বসে থাকব আমরা? সরকার আমাদের কথা শুনছে না। যাতে কোনও সমাধান বেরিয়ে আসে তাই আমি জীবন দিলাম।’ ওই নোটে লাদি নাকি আরও লিখেছেন, যেন আন্দোলনস্থলেই তাঁর শেষকৃত্য করে নাতি। তবে এই নোট আদৌ লাদি লিখেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কৃষক আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা বঢরা। তিনি টুইট করে বলেন, “এই প্রবল ঠান্ডায় দিল্লির সীমানায় বসে থাকা কৃষকভাইদের মৃত্যুর খবর বিচলিত করার মতো। সংবাদমাধ্যমের থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে এখনও পর্যন্ত ৫৭ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই অসুস্থ। মাসের পর মাস নিজেদের ন্যায্য দাবি নিয়ে বসে থাকা কৃষকদের কথা না-শুনে সরকার ঘোর অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে।" কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা মোদী সরকারকে ‘নিষ্ঠুর’ আখ্যা দিয়েছেন।
গত বুধবার কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে মোদী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা তাদের চারটি প্রধান দাবির মধ্যে দু’টি মেনে নিয়ে জানিয়েছিলেন, দিল্লির দূষণ রুখতে খড় পোড়ানোর শাস্তির আওতা থেকে কৃষকদের বাইরে রাখা হবে। সংশোধিত বিদ্যুৎ আইনে কৃষকদের জন্য ভর্তুকি বজায় থাকবে। কিন্তু তিনটি কৃষি আইনের প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম দাম বা এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তা নিয়ে তাঁরা কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। কৃষক নেতা গুরনাম সিংহ চাদুনির অভিযোগ, "ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে সরকার কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে। সরকার যতই বলুক এমএসপি তুলে নেওয়া হবে না, কিন্তু এ বিষয়ে আইনি গ্যারান্টিও দিচ্ছে না।"
আজকের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলবীর সিংহ রাজেওয়াল, দর্শনপাল, গুরনাম সিংহ চৌধুরি, জগজিৎ সিংহ ঢলেওয়াল প্রমুখ কৃষক নেতা। ছিলেন যোগেন্দ্র যাদবও। নেতাদের বক্তব্য, "আমরা অনেক দিন ধরেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সরকারকে অনেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হাতে দু'টি মাত্র রাস্তা রয়েছে। হয় তিনটি কৃষি আইন বাতিল করা হোক, নয়তো বলপূর্বক আমাদের সরিয়ে দেওয়া হোক। এ বার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। আমরা ছাব্বিশে জানুয়ারি দিনটি বেছে নিয়েছি, কারণ প্রজাতন্ত্র দিবস মানুষের সর্বোচ্চ অধিকারের কথা বলে।"
এক কৃষক নেতা দর্শনপাল বলেন, “আগামী ৪ জানুয়ারি ফের বৈঠক। ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি শুনবে। যদি কোনও সমাধানসূত্র না বেরোয়, বা বৈঠক যদি ব্যর্থ হয়, তা হলে প্রজাতন্ত্র দিবসে তেরঙ্গা নিয়ে দিল্লি রাস্তায় মহামিছিল করব আমরা।” তিনি আরও জানানন, ৬ জানুয়ারি হরিয়ানার কুন্ডলি-মানেসর-পালওয়াল এক্সপ্রেসওয়েতেও সমাবেশ হবে। ২৩ জানুয়ারি রাজভবনে বাইরে প্রতিবাদ সভা করা হবে।