ছবি: পিটিআই।
তিন কৃষি আইনে সরকার কী কী সংশোধনে রাজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সবেমাত্র সে কথা বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠলেন কৃষক নেতারা। জানিয়ে দিলেন, কৃষি আইনে সংশোধনের প্রস্তাব তাঁরা আগেই খারিজ করেছেন। তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। এখন মন্ত্রীরা বলুন, সরকার কী ভাবে আইন প্রত্যাহার করবে।
মন্ত্রীরা জানতে চেয়েছিলেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া আর কি কোনও বিকল্প নেই? কৃষক নেতারা জবাব দিলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিকল্প একটাই। তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার। এই জবাবের পরে ৪০ জন কৃষক নেতা একসঙ্গে টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানালেন।
এর আগে ষষ্ঠ রাউন্ডের বৈঠকে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা কৃষক নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও কৃষক নেতারা সরকারের চা-জলখাবার খান না। গুরুদ্বারের লঙ্গর থেকেই তাঁদের জন্য খাবার যায়। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালরা এর আগের বৈঠকে কৃষকদের সঙ্গেই লঙ্গরের খাবার খেয়েছিলেন। চারটির মধ্যে কৃষকদের দু’টি দাবিও মেনে নেওয়া হয়েছিল। সরকারের আশা ছিল, এর বিনিময়ে কৃষক নেতারা তাঁদের প্রধান দুই দাবি, কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের দাম বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি নিয়ে নরম সুর নেবেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার আইন প্রত্যাহার না করার বিষয়ে অনড় দেখে কৃষক নেতারা আরও সুর চড়িয়েছেন। এমনকি, বৈঠকের বিরতিতে মন্ত্রীদের বলে দিয়েছেন, ‘আপনারা সরকারি চা-জলখাবার খান। আমরা নিজেদের লঙ্গরের খাবার খাব।’ বিজ্ঞান ভবনের মেঝেতে বসে গুরুদ্বারের লঙ্গর থেকে আসা ডাল-রুটি খেয়েছেন কৃষক নেতারা। আন্দোলনে মৃত কৃষকদের স্মরণে বৈঠকের শুরুতে দু’মিনিট নীরবতা পালন করেছেন তাঁরা। মন্ত্রী-আমলারাও তাতে যোগ দিয়েছেন।
ফলে আজ সরকার-কৃষক সংগঠনগুলির সপ্তম রাউন্ডের বৈঠকের পরেও সমাধানসূত্র বের হল না। ঠিক হয়েছে, আগামী ৮ জানুয়ারি অষ্টম রাউন্ডের বৈঠক হবে। বৈঠকের পর কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা আজ এককাট্টা হয়ে সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছি, কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কৃষকরা দিল্লির সীমানা থেকে বাড়ি ফিরবেন না। আর বৈঠকে ৪০টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা এলেও ৪৫০টির বেশি সংগঠন আন্দোলনে রয়েছে।’’
এ দিনের বৈঠকে অবশ্য সরকারি মন্ত্রীদের অবস্থানে একটি ফারাক চোখে পড়েছে কৃষক নেতাদের। তা হল, তাঁরা সরাসরি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি নাকচ করেননি। বলেছেন, যে সব রাজ্যে এই আইনে উপকার হবে, সেখানেও কথা বলতে হবে। অনেক কৃষক সংগঠন আইনকে সমর্থন করছে। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। শুনে হান্নান মোল্লা-সহ কৃষক নেতারা বলেন, সঙ্ঘ পরিবারের কৃষক সংগঠনই এর বিরোধিতা করছে। তাঁরা মুখে না বললেও, ঘরোয়া ভাবে কৃষক নেতাদের লড়ে যেতে বলছেন। পরে বিরতির সময়ে কৃষক নেতা যোগীন্দ্র উগ্রহান বলেন, ‘‘ মন্ত্রী বলছেন, দেশের অনেক কৃষক কৃষি আইন সমর্থন করছেন। তা হলে বৃষ্টির মধ্যে কারা বসে আছেন? আমরা কি বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে এসেছি?’’ কৃষিমন্ত্রী এ দিন এমএসপি নিয়ে আলোচনা করতে চান। কিন্তু কৃষক নেতারা জবাব দেন, কৃষি আইন থাকলে এমএসপি নিয়ে আলোচনা করে কী লাভ?
গত কাল সারা দিনই দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছিল। প্রবল শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে আজও বৃষ্টির মধ্যেই বিজ্ঞান ভবনে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে যখন কৃষিমন্ত্রী তোমর ফের ৮ জানুয়ারির বৈঠকের কথা জানাচ্ছেন, তখনও আকাশে মেঘ গজরাচ্ছে। বৈঠকের ‘তারিখ পে তারিখ’ নিয়ে প্রশ্নের মুখে কৃষিমন্ত্রী নালিশ করেছেন, সরকার দশ পা এগিয়েছে। কিন্তু কৃষক নেতারা এক পা-ও এগোচ্ছেন না। দু’হাত না হলে তালি বাজবে না।
উল্টো দিকে কৃষক নেতাদের অভিযোগ, হাজার হাজার কৃষক গত ৩৮ দিন ধরে শীত, বৃষ্টি মাথায় করে দিল্লির সীমানায় বসে থাকলেও সরকার জেদ ধরে রয়েছে। সিংঘু সীমানায় এ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কৃষক নেতা রাজেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘প্রায় ৬০ জন কৃষক মারা গিয়েছেন। মন্ত্রীরাও আজ শহিদ কৃষকদের জন্য নীরবতা পালন করেছেন। ’’ কৃষকদের দুর্দশা সত্ত্বেও সরকারের অনড় মনোভাবের নিন্দা করেছেন কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা বঢরা-সহ বিরোধী নেতানেত্রীরা। আর কৃষকদের লাগাতার প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়ার পর পঞ্জাবের বিজেপি নেতারা আগামিকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।