ছবি: পিটিআই।
অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ প্রয়াত। কৃষি আইন নিয়ে কৃষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে এ বার তাঁদের অভাব টের পাচ্ছে মোদী সরকার। কিন্তু একই সঙ্গে মোদী সরকারের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, রাজনাথ সিংহের মতো পোড় খাওয়া নেতাকে কেন কৃষক নেতাদের বোঝাতে কাজে লাগানো হচ্ছে না!
তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে আন্দোলন শুরুর পরে শনিবার কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক সংগঠনের নেতাদের পঞ্চম দফার বৈঠক হয়েছে। তার পরেও কোনও রফাসূত্র মেলেনি। দিল্লিতে অবরোধ শুরুর আগে একটি বৈঠকে রাজনাথ হাজির ছিলেন। কিন্তু দিল্লির অবরোধ শুরুর পরে তিন বারই বিজ্ঞান ভবনে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
বিজেপির এক নেতা বলেন, “পঞ্জাবে ২০২২-এর গোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন। এক বছর দু’তিন মাস দেরি। কৃষি আইন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে বিজেপি স্রেফ মুছে যাবে।” দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপি নেতারা রাজ্যে নিয়মিত কৃষকদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। অনেকেই দল ছেড়ে হয় কংগ্রেস, নয়তো আম আদমি পার্টিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন। এই ক্ষোভের উত্তাপ এড়াতেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে শিরোমণি অকালি দল। বিক্ষুব্ধ অকালি নেতা সুখদেব সিংহ ধিন্দসার গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব তৈরির চেষ্টা করছিল বিজেপি। কিন্তু এখন তারাও বেঁকে বসেছে।
দিল্লি ঘেরাও করে মূলত পঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকরাই আন্দোলন করছেন। শনিবার ভারত কিসান ইউনিয়ন (একতা-উগ্রহণ) জানিয়েছে, হরিয়ানা-দিল্লি সীমানায় সিংঘুর আন্দোলনের গোটা এলাকাকে ভাগ করে বাবা বন্দা সিংহ নগর, শহিদ ভগৎ সিংহ নগর, শহিদ সাধু সিংহ তখতপুরা নগর, চাচা অজিত সিংহ নগর, বিবি গুলাব কউর নগর নামকরণ করা হবে। বাবা বন্দা সিংহ ‘জমি যার লাঙল তার’ দাবিতে লড়েছিলেন। চাচা অজিত শুরু করেছিলেন ‘পাগড়ি সম্ভাল জাট্টা’ আন্দোলন। গুলাব কউর পঞ্জাবের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের নারী মুখ ছিলেন। সাধু সিংহ তখতপুরা লড়েছিলেন জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। কৃষকদের পাশে দাঁড়য়েছেন পঞ্জাবের শিল্পী, অভিনেতা, গায়কেরা। অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস থেকে অলিম্পিকে অংশ নেওয়া
ক্রীড়াবিদেরা সরকারি পদক ফেরানোর ঘোষণা করছেন।
এতেই বিজেপি নেতারা বিপদ দেখছেন। পঞ্জাবের মানুষ এমনিতেই আবেগপ্রবণ। সেখানে বিজেপির শক্তি কম। এ সবের পরে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে অনেকখানি পিছিয়ে পড়বে। কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় হোসিয়ারপুরের সাংসদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোম প্রকাশকে ডাকা হচ্ছে। পঞ্জাবের বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, ‘‘সোম প্রকাশের কথা তেমন গুরুত্ব পাবে না। পীযূষ গয়াল মুম্বইয়ের নেতা। শিল্পপতিদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী। তাঁকে কৃষকদের সঙ্গে দর কষাকষিতে নামানোটাই ভুল।’’ উল্টো দিকে সরকারের যুক্তি, রামবিলাস পাসোয়ানের মৃত্যুর পরে গয়ালকেই খাদ্য-গণবণ্টন বিষয়ক দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই তিনি সরকারের প্রতিনিধি।
শনিবার বিজ্ঞান ভবনের বৈঠকের মধ্যেই অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা বাইরে বিক্ষোভ দেন। বিজ্ঞান ভবনের পাশেই উপরাষ্ট্রপতির বাসভবন। তার সামনেই স্লোগান শুরু হয়ে যায়। ট্রাক মালিকদের সংগঠন আগেই চাক্কা জ্যামের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এমনিতেই সড়ক অবরোধের তুলনায় দিল্লিতে স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেক আনাজ ঢুকছে। কৃষক নেতাদের দাবি, শুধু পঞ্জাব-হরিয়ানা নয়, গোটা দেশেই প্রভাব পড়বে বন্ধের। কারণ সাধারণ মানুষ কৃষকদের দাবির পক্ষে। সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি ও সিপিআই-এমএল— এই পাঁচ বাম দল আজ কৃষক সংগঠনগুলির ৮ ডিসেম্বরের ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়ছে।
সরকারের আশঙ্কা, ডিসেম্বরের শীতে জাতীয় সড়কে বসে থাকা কোনও কৃষক নেতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। শুক্রবার রাতে কৃষক সংগঠনের নেতা বলবীর সিংহ রাজেওয়ালকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। শনিবার হাসপাতল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি বৈঠকে যোগ দেন। কৃষিমন্ত্রী তোমর বৈঠকে অনুরোধ করেন, অন্তত বৃদ্ধ ও শিশুদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। না-হলে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কিন্তু কৃষক নেতারা তাতে কান দেননি।