ফাইল চিত্র।
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইয়ের মাঠ। সেখান থেকে সিঙ্গুর—বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়নের অপূর্ণ স্বপ্নের জমি। সেই সঙ্গে ‘হোক কলরব’-এর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। থাকতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-কুলতলিও।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন কলকাতায়, ঠিক তখন কৃষক আন্দোলনের নেতারা তাঁদের বাংলা সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন। কলকাতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রচারের দিকে ইঙ্গিত করে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘সরকার তো কলকাতায় চলে গিয়েছে। তাই আমরাও আগামী সপ্তাহে কলকাতায় যাব। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলব।’’
এখনও পর্যন্ত ঠিক হওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, ১১ মার্চ রাত থেকেই দিল্লির সীমানায় কৃষক আন্দোলনের নেতারা একে একে কলকাতায় পৌঁছবেন। প্রথমে ঠিক ছিল, ১২ থেকে ১৪ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রচার হবে। কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকারকে হটানোর ডাক দেওয়া হবে। এখন ১৫ মার্চ যাদবপুরে সভার পরিকল্পনা হচ্ছে। রাকেশ টিকায়েত, বলবীর সিংহ রাজেওয়াল, দর্শন পাল, হান্নান মোল্লা, যোগেন্দ্র যাদব, গুরনাম সিংহ চান্দুনির মতো কৃষক আন্দোলনের নেতারা দফায় দফায় কলকাতা, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, আসানসোল, জয়নগরে সভা করবেন। কথা বলবেন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গ সফরের প্রস্তুতি নিলেও কৃষক নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা তৃণমূল বা কংগ্রেস-সিপিএম জোটের হয়ে প্রচারে যাচ্ছেন না। কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকারকে হটানোর কথা বলবেন তাঁরা। কারণ, মোদী সরকার কৃষি আইন প্রত্যাহারে নারাজ। অতএব মোদী সরকারকে সরানো না-গেলে কৃষি আইনও বিদায় হবে না।
তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের ১০১তম দিনে আজ টিকরিতে রাজবীর সিংহ নামে এক কৃষকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। হরিয়ানার হিসারের পঞ্চান্ন বছর বয়সি এই কৃষক গাছের ডাল থেকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। হরিয়ানা-দিল্লি সীমানার টিকরিতেই গত তিন মাস ধরে কৃষক আন্দোলনকারীদের জন্য নিখরচায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালাচ্ছেন বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসকারী হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ স্বইমন সিংহ। কৃষকদের কথা ভেবে তিনি আপাতত নিউ জার্সি ফেরা স্থগিত রেখেছেন।
১০১ দিন ধরে আন্দোলন, আড়াইশোর উপরে কৃষকের মৃত্যু সত্ত্বেও কৃষক সংগঠনগুলি জানিয়ে দিয়েছে, তারা পিছু হটছে না। গাজ়িপুর থেকে এ দিন উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের জেলায় জেলায় প্রচারের জন্য ট্র্যাক্টর যাত্রা শুরু হয়েছে। শনিবার দিল্লি-হরিয়ারা সীমানায় কৃষকরা কেএমপি (কুণ্ডলী-মানেসর-পলওয়ল) হাইওয়ে অবরোধ করেছিলেন। আজ টিকায়েত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সিঙ্ঘু-গাজ়িপুর-টিকরির মতো ওই হাইওয়েও পাকাপাকি অবরোধ করা হতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর শনিবারই বলেছিলেন, কেন্দ্র কৃষি আইন সংশোধনে তৈরি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কৃষি আইন ত্রুটিপূর্ণ। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীরা এ নিয়ে রাজনীতি করছেন। তাতে অবশ্য বিরোধীরা পিছু হটছেন না। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা রবিবার মেরঠে কিসান মহাপঞ্চায়েতে বলেছেন, ১০০ দিনের পরে ১০০ মাস কৃষকেরা আন্দোলন করলেও কংগ্রেস তাদের পাশে থাকবে। কংগ্রেসের কৃষক সংগঠন এ দিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিল। এআইসিসি-র দফতরের বাইরেই নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়।