ছবি পিটিআই।
মঙ্গলে নয়, বুধবারে বৈঠক।
কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আগামী বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বৈঠকে বসতে চান বলে মোদী সরকার জানাল। আজ কৃষি মন্ত্রকের সচিব সঞ্জয় আগরওয়াল ৪০ জন কৃষক নেতাকে চিঠি দিয়ে বুধবার দুপুরে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের দাবি মতো তিন কৃষি আইনের প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে কি না, এ বিষয়ে সরাসরি কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। চিঠি পেয়ে কৃষক নেতাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, সরকার শব্দ নিয়ে খেলা করছে। কৃষকদের তরফে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চাওয়া হয়েছিল। কৃষিসচিব জানিয়েছেন, তিন কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা হবে। যার অর্থ, সরকার কৃষক নেতাদের প্রস্তাবিত অলোচ্যসূচি নিয়ে কথা বলতে রাজি নয়। সরকার মুখে খোলা মনে আলোচনার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে তা করছে না।
কৃষক নেতারা মোদী সরকারকে চিঠিতে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ২৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে রাজি। কিন্তু তাঁদের শর্ত, ওই বৈঠকে চারটি বিষয় আলোচ্যসূচিতে রাখতে হবে। এক, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া। দুই, চাষের সমস্ত খরচের দেড় গুণ ফসলের দাম বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি। তিন, দিল্লির দূষণ রুখতে খড় পোড়ানোয় চাষিদের কড়া শাস্তির আইনে সংশোধন। চার, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিলে বদল।
আলোচ্যসূচির প্রথম বিষয়েই কৃষক নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁরা কৃষি আইনের প্রত্যাহারের দাবিতে অনড়। তা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন। আজ কৃষিসচিব মঙ্গলের বদলে বুধবারবৈঠক ডেকে জানান, বৈঠকে তিন কৃষি আইন, এমএসপি-তে ফসল কেনা, খড় পোড়ানো রোখার আইন ও বিদ্যুৎ আইনে সংশোধনী বিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এই চিঠির বয়ান দেখেই কৃষক নেতাদের মত, সরকার শব্দ নিয়ে ছলচাতুরি করছে। বুধবারের বৈঠকে তাঁরা ওই চার দাবিতে অনড় থাকবেন।
এর আগে ২৯ ডিসেম্বরের বৈঠক সফল না-হলে ৩০ ডিসেম্বর কৃষকদের দিল্লির সীমানায় ট্রাক্টর মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সরকার সেই দিনেই বৈঠক ডেকে দেওয়ায়, আন্দোলনকারীরা স্থির করেছেন ৩০ তারিখের বৈঠকে কোনও ফল না-হলে পরের দিন, অর্থাৎ ৩১ তারিখ তাঁরা ওই ট্রাক্টর মিছিল করবেন। এ ছাড়া, আগামী ২ জানুয়ারি তাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করবেন দিল্লিতে এসে।
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর আজও ফের কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। পঞ্জাব-হরিয়ানার কিছু সংগঠন বাদে গোটা দেশ কৃষি আইনকে সমর্থন করছেন— এটা বোঝাতে তোমর বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সোমবারও তিনি বিভিন্ন রাজ্যের ১১টি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। কৃষি জাগরণ মঞ্চ নামে পশ্চিমবঙ্গের একটি সংগঠনও ছিল। তোমর বলেন, “ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহ, শরদ পওয়ারও এই কৃষি সংস্কার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে তাঁরা তা পারেননি।”
তোমর যা-ই বলুন। দিল্লির সীমানায় বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সংখ্যা রোজই বাড়ছে। এ দিন সিংঘুতে আরও বসার জায়গা তৈরি করতে হয়েছে। পঞ্জাবের পর হরিয়ানাতেও জাতীয় সড়কে একের পর এক টোল প্লাজা খালি করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে টোল আদায় করা না-যায়। অম্বানী-আদানি বয়কটের ডাকে পঞ্জাবে প্রায় ১৪০০ জিয়ো-র মোবাইল টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি না-করার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। আজ তিনি কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজেপি নেতারা কৃষকদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়ছেন। বার্নালায় কৃষকরা বিজেপির জেলা সভাপতি যদবিন্দর সিংহর বাড়ির বাইরে ধর্না দিচ্ছিলেন। সেখানে সুখদেব সিংহ গুরম নামে এক ৫৫ বছরের কৃষক হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পঞ্জাবের বিজেপি নেতারা এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করে পুলিশকে সক্রিয় হতে আর্জি জানান।