কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ছবি সংগৃহীত।
সোমবার সাতসকালে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে আচমকা একটা ট্রাক ব্রেক কষে দাঁড়াল। ট্রাক থেকে নামানো হল ট্র্যাক্টর। সঙ্গে বাসন্তী রঙের পাগড়িতে যুব কংগ্রেসের এক ঝাঁক নেতা-কর্মী। পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ট্র্যাক্টরে আগুন ধরিয়ে পঞ্জাব যুব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা স্লোগান তুললেন, ‘কালা কানুন ওয়াপস লো!’, ‘ভগৎ সিংহ অমর রহে!’
রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতি তিন কৃষি বিলে সই করেছিলেন। সোমবার সাতসকালে ইন্ডিয়া গেটের সামনে আচমকা বিক্ষোভের পরে কংগ্রেস নেতৃত্ব সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের সাংবিধানিক লড়াইও শুরু করে দিল।
মোদী সরকারের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আজ কেরলের কংগ্রেস সাংসদ টি এন প্রতাপন সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকেছেন। তাঁর দাবি, অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেওয়া হোক এই তিন আইনকে। পঞ্জাব সরকারও সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে। মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ আগামী কাল আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলিকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন, কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন খারিজ করে দিতে রাজ্য নিজস্ব আইন আনতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখা হোক।
আরও পড়ুন: এয়ার ইন্ডিয়ার মুনাফা বাড়াতে ‘ছক’ কেন্দ্রের
বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির অন্যতম অভিযোগ ছিল, তিন কৃষি আইনে কেন্দ্র রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। সনিয়ার পরামর্শ, সংবিধানের ২৫৪(২) অনুচ্ছেদ মেনে রাজস্থান-ছত্তীসগঢ়-পঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলি নিজস্ব আইন এনে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী আইন খারিজ করে দিতে পারে। দলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘এর ফলে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি তুলে দিতে যে তিন আইন এসেছে, তা রাজ্যগুলি এড়িয়ে যেতে পারবে। মোদী সরকার তথা বিজেপির অবিচার থেকেও চাষিরা রেহাই পাবেন।’’
২০১৪-য় মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ইউপিএ সরকারের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইনে সংশোধন করতে শিল্পের জন্য জমি পাওয়ার রাস্তা সহজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দল এবং রাজ্য সরকারগুলির আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। অধ্যাদেশ জারি করলেও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে কেন্দ্র সংসদে বিল পাশ করিয়ে সেই অধ্যাদেশকে পাকা আইনের চেহারা দিতে পারেনি।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরু জঙ্গিদের স্বর্গ, তেজস্বীর কথায় বিতর্ক
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আজ বলেন, ‘‘সে সময় অরুণ জেটলি বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিকে বলেছিলেন, সংবিধানের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রের আইন খারিজ করে দিতে। এখন রাজ্যগুলি সে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে।’’
তিন কৃষি আইনে কেন্দ্র বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সরাসরি চাষিদের থেকে চুক্তি-চাষের মাধ্যমে ফসল কেনা ও চাল-ডাল-গমের মতো খাদ্যদ্রব্য যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্র দিয়েছে। সাংসদ প্রতাপন সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় যুক্তি দিয়েছেন, এর ফলে বেসরকারি ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি খাদ্যপণ্যের অনিয়ন্ত্রিত বাজার তৈরি করবে। এই আইন সংবিধানের ১৪, ১৫ ও ২১-তম অনুচ্ছেদের বিরোধী। তা ছাড়া এই আইন রাজ্যের অধিকারেও হস্তক্ষেপ করছে।
দিল্লি থেকে কর্নাটক, পঞ্জাব থেকে তেলঙ্গানা— কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন বা রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। কর্নাটকে চাষিদের বন্ধকে কংগ্রেস এবং জেডি-এস সমর্থন জানানোয় রাজ্য জুড়েই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়া গেটের ‘হাই সিকিয়োরিটি জ়োন’-এ ট্র্যাক্টরে আগুন ধরানোর ঘটনা দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তা আয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিজেপি এখন বলছে, ট্র্যাক্টর পুড়িয়ে আদতে চাষিদেরই অপমান করছে কংগ্রেস।
এ দিকে ভগৎ সিংহের জন্মবার্ষিকীতে শহিদের গ্রাম খটকর কলাঁতে গিয়ে ধর্নায় বসেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি। কেন্দ্র এখন কৃষির অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছে। রাজ্যের হাতে বাকি কী থাকবে? আদানি গোষ্ঠী রেশন দোকান চালাবে? কেন্দ্র বলছে, পঞ্জাবের চাষিরা আন্দোলন করছে কেন! আন্দোলন করবে না তো কি লাড্ডু বিল্লি করবে?’’