রাহুল গাঁধী। ছবি: সংগৃহীত।
সংসদের ভিতরে ও বাইরে কৃষকের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। সদ্য পাস হওয়া বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে এ ভাষাতেই আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। রাহুলের মতে, নয়া কৃষি আইনগুলি কৃষকের কাছে মৃত্যুদণ্ডের সমান। সেই সঙ্গে কৃষি বিল যে ভাবে পাস হয়েছে, তা নিয়ে তাঁর দাবি, এ দেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে।
রাজ্যসভায় কৃষি বিল পাস করানোর জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার যে বিরোধীদের দাবিকে ধামাচাপা দিয়েছে, সে অভিযোগ আগেই তুলেছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। সোমবার ফের একই দাবি করেছেন রাহুল। এ দিন টুইটারে একটি মিডিয়া রিপোর্টকে জুড়ে দিয়ে রাহুলের দাবি, “কৃষি আইন আমাদের কৃষকদের জন্য মৃত্যুদণ্ড। সংসদের ভিতরে এবং বাইরে তাঁদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। ভারতে যে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে, এটাই তার প্রমাণ।”
ওই মিডিয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যসভায় সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে, বিরোধী নেতা সিপিএমের কে কে রাগেশ এবং ডিএমকে-র ত্রিচি শিবা তাঁদের আসনে বসে রয়েছেন। অথচ ২০ জুন রাজ্যসভায় জোড়া কৃষি বিল পাস ঘিরে তুমুল হইহট্টগোলের মাঝে অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশনারায়ণ সিংহ জানিয়ে দেন, ভোটাভুটির জন্য বিরোধী নেতারা আসনে নেই। এর পর ধ্বনিভোটে পাস হয়ে যায় ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন বিল’ এবং ‘কৃষক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন বিল’— এই জোড়া কৃষি বিল।
ওই অধিবেশনে ওয়েলে নেমে প্রতিবাদের পাশাপাশি ডেপুটি চেয়ারম্যানের টেবিলের সামনেও বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। তুমুল হইহট্টগোলের মধ্যে রুল বুক ছিঁড়ে ফেলার মতো অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে। এর পর শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আট বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসেন বিরোধী সাংসদেরা। ওই অধিবেশনে যে তিন জন বিরোধী নেতা কৃষি বিলগুলি সংশোধনের জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন হলেন রাগেশ এবং শিবা। তবে কার্যত নজিরবিহীন ভাবে সে দাবিকে অগ্রাহ্য করে ধ্বনিভোটের নির্দেশ দেন হরিবংশ। তা নিয়ে সরব বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, ভোটাভুটি হলে রাজ্যসভায় হেরে যাওয়ার আশঙ্কাতেই এবং মোদী সরকারকে সাহায্য করতেই ধ্বনিভোটের নির্দেশ দিয়েছিলেন হরিবংশ। এর পর বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধনী) বিল’ নামের তৃতীয় বিলটিও পাশ করিয়ে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কৃষি বিল নিয়ে রাজ্যসভায় ধুন্ধুমার ঘটলেও ধ্বনিভোটে পাসের পর রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের তাতে স্বাক্ষরের পর বিলগুলি আইনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: দীপিকা, সারা আর শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ড বাজেয়াপ্ত করল এনসিবি, দেখা হবে অ্যাকাউন্টও
আরও পড়ুন: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে এলআইসি, কর্মীদের বেতন থেকে ২০০ কোটিরও বেশি দান পিএম কেয়ার্সে
কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য অধ্যাদেশ জারি করার পর থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্য তা ঘিরে কৃষক সংগঠনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কৃষি বিলগুলি আইনে পরিণত হওয়ার পর সে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। এ দিন সকালে দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে একটি ট্যাক্টরে অংগ্নিসংযোগ করা হয়। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে, কর্নাটকে বিক্ষোভ বড় আকার নেয়। এ দিন কর্নাটকে রাজ্য জুড়ে কৃষক সগঠনগুলির ডাকা বন্ধের সমর্থন করেছে কংগ্রেস। পঞ্জাবে ধর্নায় বসেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ। এই আবহে ফের নতুন করে মোদী সরকারকে নিশানা করলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।