প্রণব মুখোপাধ্যায়
নাগপুরে কাল, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ শিবিরের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার কথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। সকলেরই কৌতূহল, সেখানে গিয়ে প্রণববাবুকে ঠিক কী কী করতে হবে। আদ্যন্ত ‘কংগ্রেসি’ প্রণববাবুর রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সঙ্ঘের নীতি-আদর্শ কোনও ভাবেই খাপ খায় না। তার পরেও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় সকলেই তাকিয়ে নাগপুরের দিকে।
সারা দেশের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে সঙ্ঘের শিবিরের শেষ দিনে ‘সমারোপ’ অনুষ্ঠানে বরাবরই বাইরের কাউকে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাকা হয়। প্রতিটি রাজ্য থেকে এক বা একাধিক বিশিষ্ট জনকেও সঙ্ঘ আমন্ত্রণ জানায়। এ বার যেমন রাজ্য থেকে ফুটবলার কল্যাণ চৌবে নাগপুরে আমন্ত্রিত।
সঙ্ঘের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘প্রণববাবুর জন্য রীতি ভাঙার প্রশ্ন নেই। তবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির সম্মান রক্ষার্থে যা করার, তা অবশ্যই করা হবে।’’
আরও পড়ুন: ডায়মন্ড হারবারে ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’, অভিষেকের পথ কি চওড়া হচ্ছে?
কী সেই রীতি?
সঙ্ঘ সূত্রের বক্তব্য, সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে সঙ্ঘপ্রধান তাঁকে নিয়ে যান রেশম বাগে সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার (ডাক্তারজি) এবং দ্বিতীয় সঙ্ঘপ্রধান মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকর (গুরুজি)-র স্ম়ৃতি মন্দিরে। সেখানে পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মান জানানোর পরে প্রধান অতিথিকে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। এর পরে হয় সঙ্ঘের নিজস্ব প্রার্থনা। নরহর নারায়ণ ভিদে নামে এক অধ্যাপক সংস্কৃতে এই প্রার্থনা লিখেছিলেন বলে সঙ্ঘের খবর। তাতে অবশ্য, মাতৃভূমিকে ‘হিন্দুভূমি’ এবং প্রার্থনাকারীদের ‘হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের অনুঘটক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর পরে শারীরিক কসরত। এ সব শেষ হলে প্রধান অতিথি বক্তৃতা করেন। সব শেষে বলেন সঙ্ঘপ্রধান।
এখন প্রশ্ন, রাষ্ট্রপতি বা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি যেখানে যান, সেখানে তিনিই হন শেষ বক্তা। কিন্তু আরএসএসের অনুষ্ঠানে সঙ্ঘপ্রধানই একেবারে শেষে বলেন। রাষ্ট্রপতি বা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মঞ্চে বিজোড় সংখ্যার চেয়ার রাখা হয়। যাতে ঠিক মাঝে বসতে পারেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কি সে সব মানা হবে? সঙ্ঘের মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘প্রণববাবু সঙ্ঘের আমন্ত্রণে আসছেন। এই অনুষ্ঠান সকলের জন্য প্রকাশ্য অনুষ্ঠান নয়। ফলে, আমাদের রীতিই মানা হবে।’’
যদিও প্রণববাবুর দফতর সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় নাগপুর পৌঁছনোর কথা প্রণববাবুর। পর দিন সন্ধ্যায় সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছ’টা মঞ্চে থাকবেন তিনি। অর্থাৎ মূলত বক্তৃতার সময়টুকু মঞ্চে থাকার কথা তাঁর। সঙ্ঘের কর্তাদের সঙ্গে নৈশাহার সেরে ৮ তারিখ নয়াদিল্লি ফেরা। এর মধ্যে গত রাতে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা প্রণববাবুর বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করেছেন, সঙ্ঘের প্রথা যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে। তা না-হলে কংগ্রেসিদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।