দেশে এখন চরম অসহিষ্ণুতা, মুখ খুললেন শাহরুখ

এ বার শাহরুখ খান। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনিও। সোমবার নিজের পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে শাহরুখ বললেন, ‘‘দেশে চরম অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা আর ক’দিনের মধ্যে অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।’’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘অসহিষ্ণু হওয়াটা অত্যন্ত নির্বোধের কাজ। আমাদের মতো দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাতে না পারার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর নেই।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৩
Share:

ছবি: এএফপি।

এ বার শাহরুখ খান। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনিও।

Advertisement

সোমবার নিজের পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে শাহরুখ বললেন, ‘‘দেশে চরম অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা আর ক’দিনের মধ্যে অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।’’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘অসহিষ্ণু হওয়াটা অত্যন্ত নির্বোধের কাজ। আমাদের মতো দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাতে না পারার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর নেই।’’

প্রতিবাদী লেখক-শিল্পী-শিক্ষাবিদ-শিল্পকর্তাদের তালিকায় এ ভাবেই ঢুকে গেলেন এক জন সুপারস্টারও। কাল মুখ খুলেছিলেন প্রবীণ সরোদশিল্পী আমজাদ আলি খান। সরকারি পুরস্কার যাঁরা ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের ভাবাবেগকে সমর্থন করেছিলেন। আজ সেই কাজটাই করলেন শাহরুখ। পুরস্কার ফেরানো নিয়ে বলিউডে এখন জোর বিতর্ক চলছে। এক দিকে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়-আনন্দ পট্টবর্ধনেরা তাঁদের পুরস্কার ফেরাচ্ছেন। শাবানা আজমি, শর্মিলা ঠাকুর তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আবার অন্য দিকে অনুপম খের, মধুর ভান্ডারকররা সমালোচনায় মুখর। শাহরুখ কিন্তু বললেন, ‘‘পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত। সৎ ও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত।’’ তিনি কি তবে পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেবেন? শাহরুখের কথায়, ‘‘পুরস্কার ফেরানোটা খুবই প্রতীকী ব্যাপার বলে মনে হয় আমার। তাতে খুব কিছু বদলায় না। তবে সে রকম মুহূর্ত যদি আসে, তা হলে ফেরাব।’’ আর অনুপমদের বিরোধিতা নিয়ে কী বলবেন? ‘‘যার যার বক্তব্য রাখার স্বাধীনতার নামই সহিষ্ণুতা। অনুপম তাঁর কথা বলবেন। আবার যাঁরা পুরস্কার ফেরাতে চান, তাঁরা ফেরাবেন। সেটাই তো গণতন্ত্র।’’ ঠিক যেমন কে কী খাবেন, তাই নিয়ে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না বলেই তাঁর মত।

Advertisement

ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে এ বার মুখ খুললেন শাহরুখ খান।
সোমবার, তাঁর পঞ্চাশতম জন্মদিনে বিভিন্ন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
তবে ভক্তদেরও নিরাশ করেননি তারকা। শুভেচ্ছা কুড়োতে শাহরুখ উঠে পড়লেন মন্নতের পাঁচিলে। ছবি: এপি।

তা হলে এই প্রতিবাদের আবহে কিঙ্গ খান নিজে ঠিক কোন দিকে? শাহরুখ খোলাখুলি বললেন, ‘‘আমি জীবনে তেমন ভাবে বড় মাপের অর্থবহ কোনও বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারিনি। কিন্তু যাঁরা সাহসী অবস্থান নিতে পারেন, নিচ্ছেন, আমি তাঁদের পাশে আছি।’’ পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিতর্কেও তাঁর সমর্থন ছাত্রদের দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘যা হচ্ছে, খুব অন্যায় হচ্ছে। গোটা ব্যাপারটাই খুব অস্বস্তিকর।’’ কিন্তু হলিউড তারকারা যে ভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়ে মতামত দেন, এখানে তা হয় না কেন? সুপারস্টারের স্বীকারোক্তি, ‘‘নিজের কাজটা করে যাওয়ার তাগিদে অনেক সময়ই চুপ করে থাকতে হয়। এই বাধ্যবাধকতাটা আমার কাছে খুব পীড়াদায়ক। কিন্তু নইলে আমি জানি, আমার বাড়িতে কেউ এসে পাথর ছুড়বে! কেউ আমার ছবি আটকে দেবে! আমেরিকায় এ রকম হয় না তো!’’

এর আগে মুম্বইয়ে শাহরুখের ‘মাই নেম ইজ খান’-এর মুক্তি আটকে দিতে চেয়েছিল শিবসেনা। গুজরাতে দেখানো হয়নি ছবিটি। শাহরুখের একটি লেখার সূত্রে তাঁকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার ফতোয়াও দেওয়া হয়। বারবার তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রসঙ্গটি উঠতেই শাহরুখ এ দিন বলেন, ‘‘আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। তবে ২৫ বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পরেও যখন প্রশ্ন ওঠে, তখন ব্যথা পাই।’’

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

অসিহষ্ণুতা প্রসঙ্গে আমির খানকে কটাক্ষ অনুপমের
দেশ ছেড়ে যেতে হবে না তো! আতঙ্কিত স্ত্রীর প্রশ্ন আমিরকে
অসহিষ্ণুতা নিয়ে ফের সরব শর্মিলা, মুখ খুললেন আমজাদও

কিন্তু এই দেশে ভারতের মতো দেশে তিন শীর্ষ তারকাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, এটা কি ধর্মনিরপেক্ষতার চিহ্ন নয়? শাহরুখের উত্তর, ‘‘যে দিন এই ভাবে কিছু নাম, কিছু পদবীকে সামনে এনে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার দরকার হবে না, আমরা আসলে সেই দিন ধর্মনিরপেক্ষ হব।’’ দেশের একটা অংশে বিশেষ করে মুম্বইয়ে পাক শিল্পীদের অনুষ্ঠান নিয়ে এর আগে অনেক ঝামেলা হয়েছে। সম্প্রতি নিজের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে পাক সঙ্গীতশিল্পী গুলাম আলিকে। শাহরুখ কিন্তু আজ জানিয়েছেন, তাঁর পরবর্তী ছবিতে কাজ করছেন এক পাক অভিনেত্রী। শিবসেনা যদি ফের কোনও গোলমাল করে? শাহরুখ জানান, এই সব নিয়ে ভেবে তিনি তাঁর কাজের ক্ষতি করতে পারবেন না। নিজের কাজটা তাঁকে করতেই হবে। প্রতি বারের মতো এ বারেও তাঁর বাংলোর সামনে যথারীতি জড়ো হয়েছিলেন ভক্তরা। শাহরুখ বেরিয়ে এসে তাঁদের দিকে হাত নাড়েন। শেষ পর্যন্ত মানুষের ভালবাসাই যে তাঁকে আপ্লুত করে রাখে, স্বীকার করেন সে কথাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement