News

কে বলল আমি একা, ফোঁস করে উঠলেন শর্মিলা

বিস্তর সাধ্যসাধনার পরে, লিখিত দরখাস্তের বিনিময়ে বরাদ্দ সাকুল্যে পাঁচটি মিনিট। এ দিকে এক পৃথিবী জিজ্ঞাসা জমে। আগের বারের সাক্ষাৎকার ছিল ‘বেআইনি গেট ক্র্যাস’-এর ফসল। এ বার তো আইনত মুক্ত ইরম শর্মিলা চানু। কথা বলতে সমস্যা হওয়ার কথাই ছিল না।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

ইম্ফল শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ১৯:৩৭
Share:

বিস্তর সাধ্যসাধনার পরে, লিখিত দরখাস্তের বিনিময়ে বরাদ্দ সাকুল্যে পাঁচটি মিনিট। আগের বারের সাক্ষাৎকার নিতে বেআইনি ভাবে ঢুকে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এ বার তো আইনত মুক্ত ইরম শর্মিলা চানু। কথা বলতে সমস্যা হওয়ার কথাই ছিল না। কিন্তু আফস্পার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর অনশন ভেঙে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মণিপুরবাসীর প্রতিবাদ। তাই পুলিশ ও অনুগামিনীদের কড়া নজরেই আনন্দবাজারের সামনে মুখ খুললেন শর্মিলা। পাঁচ মিনিটেই উগরে দিলেন তাঁর অভিমান।

Advertisement

আনন্দবাজার: অনশন ভাঙার পরে প্রথম সকাল। কী খেলেন?

Advertisement

শর্মিলা: (এক গাল হেসে) আসলে সেই এক ঘর, একই বিছানা। সকালে উঠে মনেই ছিল না আমায় কিছু খেতে হবে। নাক হাতড়ে রাইলস টিউবটা খুঁজলাম। নার্স এসে মধু আর জল এগিয়ে দিলেন। তখন সব মনে পড়ল। পরে খেয়েছি হরলিক্স। দুপুরে গলা ভাত।

আনন্দবাজার: কিন্তু মুক্তি পেয়েও তো আজ একা আপনি। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, ইমারা আপনার সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। কী ভাবে
একা চলবেন?

শর্মিলা: (উত্তেজিত ভাবে) দে অল চিটেড মি! এত দিন ধরে আমার নাম ব্যবহার করেছে সবাই। জানেন, ওরা আমার লেখায় কাটছাঁট করে নিজেদের মত বসিয়ে বাইরে পাঠাত। আমার নামে বই ছাপিয়ে নিজেদের লেখা ঢোকাত। এখন আমি যেই কৌশল বদল করে মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওরা আমায় জনবিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে।

আনন্দবাজার: কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইমাদের কিছু জানালেন না কেন?

শর্মিলা: কে বলল জানাতে চাইনি? আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা মানবাধিকার কর্মীদের দিয়ে বারবার বাইরে খবর পাঠিয়েছি এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে। আলোচনা করতে চেয়েছি আপুনবা লুপের সঙ্গে। আমি ওদের সঙ্গে আলোচনা করে মত জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই বার্তা চেপে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের সেই পুরনো ঘরে শর্মিলা চানু। বুধবার ইম্ফলে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার:কিন্তু এ ভাবে তো একা রাজনৈতিক লড়াই সম্ভব নয়।

শর্মিলা: কে বলে আমি একা? (চারপাশে দাঁড়ানো সঙ্গিনীদের দেখিয়ে) এরা সবাই আমার সঙ্গে আছে। আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলব বলেই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। যা অনশন চালিয়ে গেলে সম্ভব ছিল না। মানুষও আমার যন্ত্রণা, আমার বক্তব্য বুঝবে।

আনন্দবাজার: এই সিদ্ধান্তে কি ডেসমন্ড কুটিনহোর কোনও ভূমিকা আছে?

শর্মিলা: প্রত্যক্ষ ভাবে নেই। কিন্তু আমি আমার প্রেমকে বাঁচাতে চেয়েছি। তা অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যতম প্রধান ভূমিকা নিয়েছে।

আনন্দবাজার:সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বা অনশন ভাঙার পরে ডেসমন্ডের সঙ্গে কোনও কথা বা যোগাযোগ হয়েছে?

শর্মিলা: না।

আনন্দবাজার: মা ও ভাই-ও তো আপনার সিদ্ধান্ত অখুশি?

শর্মিলা: ওরা আসলে পরিবর্তন চায় না। আমি কিন্তু প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই লড়ে যাব।

আনন্দবাজার: দীর্ঘ ১৬ বছর পরে স্বাধীনতা দিবসে আপনি মুক্ত। কী ভাবে কাটাবেন দিনটা?

শর্মিলা: কীসের স্বাধীনতা? প্রকৃত স্বাধীনতার কোনও প্রভাব তো নিজের জীবন বা মণিপুরের জীবনে অনুভব করি না। তাই কেনই বা তা পালন করব!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement