সোমবার দিল্লিতে সিবিআই কোর্টে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ছবি: প্রেম সিংহ
সাড়ে ২৬ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে গত চার দিনে। কিন্তু প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেখিয়ে প্রশ্ন করলেই, তিনি তা পড়তে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় নিচ্ছেন। তাঁকে অন্য এক অভিযুক্তের মুখোমুখি বসিয়ে একদফা জেরা করা হয়েছে। কিন্তু আইএনএক্স মিডিয়া কেলেঙ্কারির পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ খুঁজে বার করতে তাঁকে আরও জেরা করতে হবে। ইডি থেকে নতুন তথ্য মিলেছে। তা নিয়েও চিদম্বরমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
সিবিআইয়ের এই যুক্তি মেনে নিয়ে দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত আজ চিদম্বরমকে আরও চার দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠাল। সিবিআই অবশ্য পাঁচ দিনের হেফাজত দাবি করেছিল। কিন্তু বিশেষ সিবিআই বিচারক অজয় কুমার কুহার আগামী শুক্রবার পর্যন্ত চিদম্বরমকে হেফাজতে রাখার রায় দেন।
সিবিআই সূত্রের খবর, নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও সিন্ধুশ্রী খুল্লারকে সোমবার সকালে সিবিআই সদর দফতরে ডেকে চিদম্বরমের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। কিন্তু এ দিনই চিদম্বরমকে আদালতে তুলতে হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করা যায়নি। আগামিকাল, মঙ্গলবার ফের সিন্ধুশ্রীকে ডাকা হয়েছে। চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীকে বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সে সময় সিন্ধুশ্রী অর্থ মন্ত্রকে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।
মামলার কেস ডায়েরি নিয়ে সিবিআই আজ আদালতে বিদ্রুপের মুখে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কেস ডায়েরি বাঁধানো হওয়ার কথা। সেখানে প্রতিটি পৃষ্ঠায় নম্বর থাকবে। যাতে বাইরে থেকে কোনও কাগজ পরে যোগ করা না যায়। কিন্তু সিবিআই আজ আদালতে যে কেস ডায়েরি দিয়েছে, তাতে সুতো দিয়ে বাঁধা আলগা কাগজ ছিল। চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল আপত্তি তোলায় তদন্তকারী অফিসার, সিবিআইয়ের ডিএসপি আর পার্থসারথি জানান, ছাপানো বুকলেট ‘আউট অফ স্টক’। তবে প্রতিটি পৃষ্ঠায় নম্বর রয়েছে। এজলাসে আইনজীবীদের মধ্যে হাসির রোল ওঠায় সিবিআইয়ের হয়ে সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘এটা কি মাছের বাজার?’’
ইডি সূত্রের দাবি, সিবিআইকে পাঠানো নোটে জানানো হয়েছে, চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে কার্তির আর্জেন্টিনা, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, গ্রিস, মালয়েশিয়া, মোনাকো, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে সম্পত্তি রয়েছে। সিবিআই আগামী চার দিনে এ বিষয়ে চিদম্বরমকে প্রশ্ন করতে চায়। ইডি আজ সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ভুয়ো সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। চিদম্বরমের উইল নিয়েও তাঁকে জেরা করা দরকার।
আজ আদালতে চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল অভিযোগ তোলেন, ‘‘সিবিআই আইএনএক্স মিডিয়া কেলেঙ্কারিতে চিদম্বরমকে ৫০ লক্ষ ডলার ও সাড়ে চার লক্ষ ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। বাজার গরম করলেও, এ নিয়ে চিদম্বরমকে কোনও নথি দেখানো হয়নি। শুধু জানতে চাওয়া হয়েছে, পিটার মুখোপাধ্যায় তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন কি না। চিদম্বরম তার জবাবে ‘না’ বলেছেন। সিবিআইয়ের কাছে কোনও নথি থাকলে তা আদালতকে দেখাক। চিদম্বরমকে তো জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি না?’’
সিবিআইয়ের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, বেশ কিছু ই-মেল মিলেছে। তা নিয়ে চিদম্বরমকে প্রশ্ন করতে হবে। কিন্তু ওই সব নথি দেখে বিচারক প্রশ্ন তোলেন, এ সব তথ্য সিবিআইয়ের কাছে আগে থেকেই ছিল। তা হলে আগেই এ নিয়ে চিদম্বরমকে প্রশ্ন করা হয়নি কেন?
চার দিন সিবিআই হেফাজতে কাটালেও চিদম্বরমের মুখের হাসি এখনও মেলায়নি। সোমবার বিকেলে রাউজ অ্যাভিনিউ কোর্টে তাঁকে যখন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, তখন পি চিদম্বরমকে দেখে এজলাসে হাজির দুই আত্মীয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। কিন্তু চিদম্বরমের মুখে পরিচিত হাসিটা ঝুলেই ছিল। আদালত থেকে বার করে ফের যখন তাঁকে সিবিআইয়ের গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তখনও হাসি মুখেই গেটের বাইরে সমর্থকদের দেখে ‘থামস আপ’ দেখালেন।
মুখে হাসি থাকলেও, দিনটা আজ ভাল যায়নি চিদম্বরমের। দিল্লি হাইকোর্ট তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সিবিআই ইতিমধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করায় সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি আর ভানুমতীর বেঞ্চ সেই মামলা নিষ্ফলা হয়ে গিয়েছে বলে খারিজ করে দিয়েছে। বিশেষ আদালত তাঁকে সিবিআই হেফাজতে পাঠানোয় চিদম্বরম যে মামলা করেছিলেন, সোমবার তার শুনানি হবে বলে বিচারপতি ভানুমতী নির্দেশ দিলেও এ দিন তা শুনানির তালিকাতেই আসেনি। আগামিকাল, মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হবে। একই সঙ্গে ইডি-র তদন্তের বিরুদ্ধে সিবিআই যে মামলা করেছেন, তার শুনানিও মঙ্গলবার চলবে।