তুষার ধসের পরে এ রকমই অবস্থা এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের। ছবি পাঠালেন বাঙালি অভিযাত্রী সৌরভসিঞ্চন মণ্ডল।
শনিবার রাত পর্যন্ত সারা বেস ক্যাম্প চষে প্রায় ৬০ জন জখম অভিযাত্রীকে উদ্ধার করতে পেরেছেন দেবরাজরা। বেহালার দেবরাজ দত্ত, গত বছর খুম্বু আইসফলের দুর্ঘটনার জেরে এভারেস্ট অভিযান বাতিল করে ফিরেছিলেন। এ বছর ফের পাড়ি জমিয়েছিলেন স্বপ্নশৃঙ্গ ছোঁয়ার আশায়। ভাবতে পারেননি, বিপর্যয় আসবে এ বারও। আরও সামনে থেকে। রবিবার টেলিফোনে বললেন, ‘‘অনেক চেষ্টায় কয়েকটা তাঁবু দাঁড় করিয়ে ওদের ঢোকাতে পেরেছিলাম। কিন্তু রাত্রে চোখের সামনেই মারা গেলেন বেশ কয়েক জন। ঠান্ডাটা সহ্য করতে পারলেন না। ঠান্ডাকে যোঝার মতো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।’’
তুষারধসের প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটার পরেই একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছিল ধ্বংসের ছবিটা। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছেন এটা বুঝতে পারার পরেই তছনছ হয়ে যাওয়া বেস ক্যাম্প থেকে আহতদের উদ্ধারের কাজে শেরপাদের সঙ্গে হাত লাগান দেবরাজরা। সঙ্গে ভারতীয় সেনার দল। এভারেস্ট অভিযানের জন্য তাঁরাও ছিলেন বেস ক্যাম্পে। তুষারধসে চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁদের তাঁবুও, হারিয়ে গিয়েছে যন্ত্রপাতি। তবে সদস্যরা সবাই সুস্থ আছেন। আহতদের শুশ্রূষার জন্য এগিয়ে আসেন সেনা-চিকিৎসকও। রবিবার ভারতীয় সেনার ‘মৈত্রী’ অপারেশন চলেছে বেস ক্যাম্পে। দিনভর বরফ খুঁড়ে বার হয়েছে দেহ।
রবিবার দুপুরেই আরও এক বার কেঁপে ওঠে বেস ক্যাম্প। নুপৎসে শৃঙ্গ থেকে একটা ছোটখাটো তুষারধসও নামে, কিন্তু নতুন করে বিপদ বাড়েনি বলেই জানান বেস ক্যাম্পের অভিযাত্রীরা। বিকেলে বেস ক্যাম্পের নীচে গোরকশেপে এসে দেবরাজ দত্ত জানালেন, ২২টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রায় ৬০ জন আহত অভিযাত্রীকে রবিবার আকাশ পথে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়েছে। দেহগুলি এখনও বেসক্যাম্পে রয়েছে। সোমবার আবহাওয়া ভাল থাকলে সেগুলি কাঠমান্ডু পাঠানোর কথা। অনেক অভিযাত্রী এখনও নিখোঁজ।
চোখের সামনে মৃত্যুর মিছিল দেখে এখনও আতঙ্ক কাটাতে পারেননি ব্যারাকপুরের গৌতম ঘোষ। বেস ক্যাম্পের পাশেই পুমরি শৃঙ্গের ঢাল বেয়ে যখন বরফের বিশাল স্রোতটা ধেয়ে আসতে দেখেছিলেন, এক মুহূর্তের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে উঠেছিল গত বছরের খুম্বুর ছবিটা। ‘‘রক্তমাখা অবস্থায় বরফ-চাপা ভাঙা তাঁবুর তলা থেকে টেনে টেনে বার করা হচ্ছিল ওঁদের। কারও নিশ্বাস পড়ছিল। কারও নয়। আর মৃত্যু দেখতে চাই না এভারেস্টে।’’ গলা ভেঙে এল কলকাতা পুলিশের কর্মচারী গৌতমের। শনিবার সন্ধের মধ্যেই গোরকশেপে নেমেছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার উপদেষ্টা উজ্জ্বল রায় জানান, সোমবার হয়তো সরকারি প্রতিনিধিদের কাঠমান্ডু পাঠানো হবে বাঙালি এভারেস্ট অভিযাত্রীদের উদ্ধারকাজে তদারকি করার জন্য।
নেপাল দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, সরকারি ভাবে অভিযান ‘বাতিল’ ঘোষণা না করা হলেও বেস ক্যাম্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে অভিযান এগোনো মুশকিল। বেস ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ওয়ানে যাওয়ার পথও নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে নেপালের শেরপা সংগঠন সূত্রের খবর।
কেউ বেঁচে, ফিরবেন, কেউ অবশ্য কফিনে
সংবাদসংস্থা • কাঠমান্ডু
আর পাঁচ জনের মতো ছিল না ওঁদের মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনাটা। ঠিক করেন, আরামের ছুটি না কাটিয়ে দু’জনে মিলে এভারেস্ট অভিযান করবেন বিয়ের পরে। সেই মতোই লন্ডন থেকে এভারেস্টের পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন আঠাশ বছর বয়সি নবদম্পতি অ্যালেক্স ও স্যাম। কিন্তু শনিবারের ভয়াবহ তুষার ধসে যে প্রাণ হাতে করে ফিরতে হবে, তা ভাবতে পারেননি তাঁরা। শনিবার রাতেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ব্লগে লিখেছেন তাঁরা। অ্যালেক্স আর স্যাম প্রাণে বাঁচলেও, তাঁদের দলের অন্য ৫০জন ব্রিটিশ অভিযাত্রী এখনও নিখোঁজ। বেস ক্যাম্পের তুষার ধসে মৃত ২২ জন অভিযাত্রীর মধ্যে রয়েছেন গুগল সংস্থার এক এগজিকিউটিভ কর্তা ড্যান ফ্রেডিনবার্গ। সোমবার আবহাওয়া ভাল থাকলে বেস ক্যাম্প থেকে কাঠমান্ডুতে আনা হবে তাঁর দেহ। গুরুতর জখম তাঁর তিন সঙ্গী। তাঁরাও গুগলের কর্মী।