প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে এয়ার ইন্ডিয়া শেষ পর্যন্ত টাটা গোষ্ঠীর হাতে যাওয়ায় যাত্রিসাধারণের কোনও সুরাহা হবে কি না, তা বলবে ভবিষ্যৎই। তবে এই হস্তান্তরে এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে ১০ বছর আগে কেটে নেওয়া একটি ভাতার টাকা ফেরত পাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, টাটারা এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা নেওয়ার ফলেই এটা সম্ভব হল। যদিও এখন টাটার অধীনে নেই এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারেরা।
২০১৪ সালে মূল এয়ার ইন্ডিয়া সংস্থা থেকে বার করে এনে এয়ার ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস লিমিটেড নামে আলাদা সংস্থা গড়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। টাটারা এয়ার ইন্ডিয়া-সহ কয়েকটি সংস্থার দায়িত্ব নিলেও এয়ার ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস লিমিটেড তার মধ্যে নেই। এখন শুধু একটি আলাদা সংস্থা হিসেবে তারা বাইরে থেকে টাকার বিনিময়ে এয়ার ইন্ডিয়াকে পরিষেবা দেবে। এয়ার ইন্ডিয়া টাটাদের হাতে চলে যাওয়ায় তারা পুরনো নামও আর ব্যবহার করতে পারবে না। তার জায়গায় তারা ‘এআই ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে কাজ করবে।
ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, ২০১২-র জুলাই থেকে তাঁদের বেতনের ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সেই সময় আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল এয়ার ইন্ডিয়া। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ইঞ্জিনিয়ারদের অভিযোগ, তাঁদের ‘প্রোডাক্টিভিটি লিঙ্কড ইনসেন্টিভ’ (পিএলআই) বা উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহ ভাতা কেটে নেওয়া হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরে ২০১৫-য় তাঁরা আবার ২৫ শতাংশ পিএলআই পেতে শুরু করেন। এমনকি ২০১২ সাল থেকে কেটে নেওয়া সেই পিএলআই তাঁদের ফেরত দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ হারে যে-ভাতা কেটে নেওয়া হয়েছিল, তা এত দিন বকেয়া হিসেবেই পড়ে ছিল। সেটাই এখন ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সেই বকেয়ার ৬০ শতাংশ ফেরত পেয়ে গিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। তাঁদের এক জন বললেন, “এত দিন সেই বকেয়া নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি। টাটারা দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা যেমন বকেয়া টাকা ফেরত পেতে শুরু করেছেন, তেমনই আমরাও পাচ্ছি। যদিও আমাদের সঙ্গে টাটাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”
তা হলে আপনাদের সেই ভাতার টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে কেন?
ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের বক্তব্য, কোনও সংস্থা হস্তান্তরের আগে তার কর্মীদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়াটাই রেওয়াজ। এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। বকেয়া মেটানোর ঘটনা থেকে ওই ইঞ্জিনিয়ারদের বদ্ধমূল ধারণা, কেন্দ্র এ বার তাঁদের সংস্থাকেও বেসরকারি হাতে তুলে দিতে পারে। সে-ক্ষেত্রে টাটাদের নাম যেমন উঠে এসেছে, তেমনই ভাসছে আদানি গোষ্ঠীর নাম।
ইতিমধ্যেই আদানিরা দেশের একাধিক বিমানবন্দরের দায়িত্ব পেয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বড় অংশ চাইছেন, তাঁদের সংস্থাও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হোক। বিভিন্ন দাবিদাওয়া পূরণ না-হওয়ায় তাঁরা বর্তমান কর্তৃপক্ষের উপরে ক্ষুব্ধ।
ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, ১৯৯৭ সালে সব পিএসইউ-কে এক ধরনের পে স্কেল বা বেতনহারে আনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। তাঁদের ‘চার্টার্ড অব ডিমান্ড’ বা দাবিসনদ ১৯৯৭ থেকে বকেয়া। তা নিয়ে মামলাও চলছে। সেই বকেয়া কবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে তাঁরা অন্ধকারে।