ফাইল ছবি
বরাকে বন্যায় আটকে পড়া ব্যক্তিদের জন্য অসম সরকার বিশেষ বিমান চালানো শুরু করল বৃহস্পতিবার থেকে। ‘ফ্লাই বিগ’ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, আগামী ১০ দিন তারা শিলচর ও গুয়াহাটির মধ্যে বিমান চালাবে। মাথাপিছু ৩০০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। অতিরিক্ত যা খরচ হবে, সেই ভর্তুকি সরকার দেবে। প্রতিদিন গুয়াহাটি থেকে শিলচরের বিমান ছাড়বে সন্ধ্যা ৫টায়। শিলচর থেকে গুয়াহাটিগামী বিমান ছাড়বে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে। নিয়মিত বিমানের ভাড়াও বাড়ানো যাবে না বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। বিমানবাহিনীর জওয়ানরা হাফলঙে আটকে পড়া মানুষদের এ দিনও শিলচর ও যোরহাটে পৌঁছে দিয়েছেন৷ ডিমা হাসাওয়ের বিভিন্ন প্রত্যন্ত রেলস্টেশন থেকে ৩৫ জন রেলকর্মীকে উদ্ধার করেছে বায়ুসেনা৷ যোরহাট বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে ডিমা হাসাও জেলার জন্য ১৬ টন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে পৌঁছেছে বিমান। গুয়াহাটি থেকে এনডিআরএফের ২০ জন জওয়ানকে পূর্ণ সরঞ্জাম-সহ বিমানে হাফলং নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনা, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ আটকে পড়া প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে।
রাজ্যের ৩৫টি জেলার মধ্যে ২৯টি জেলার ১৯২৯টি গ্রামে বন্যা চলছে। বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা সাত লক্ষ ১৭ হাজার। সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৯। ৫৮ হাজার হেক্টরের উপরে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১৭টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, জাতীয় হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি রাস্তা মেরামত করায় পণ্যবাহী গাড়ি যাওয়া শুরু হয়েছে। নতুন ধস না নামলে দু’টি রাস্তাই শীঘ্র খোলা হবে। ২২ হাজার মেট্রিক টন চাল ও আগামী সাত-দশ দিনের অন্য খাদ্যশস্য ও তেল মজুত আছে কাছাড়ে। তাই বরাকবাসীর অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি আরও জানান, নিহতদের সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বন্যা সাহায্যে ১০০০ কোটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। জেলাগুলিকে বন্যা মোকাবিলায় ১৫০ কোটি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই টাকার অভাব নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে কথা হয়েছে। লাগলে কেন্দ্র আরও দেবে।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মুখ্য কার্যবাহী অধিকর্তা জ্ঞানেন্দ্র দেব ত্রিপাঠী জানান, ডিমা হাসাওয়ের ধসে রেলপথের যা ক্ষতি হয়েছে, তাতে নতুন করে ধস ও বৃষ্টি না হলেও রেললাইন ঠিক করতে অন্তত ৪৫ দিন লাগবে। মন্ত্রী অশোক সিংঘল ও পরিমল শুক্ল বৈদ্য বৃহস্পতিবার সকালে শিলচর আসেন। পরিমলবাবু করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির ত্রাণশিবিরগুলি ঘুরে দেখেন। সিংঘল কাছাড় জেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন৷ জানান, কাছাড় জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত সন্তোষজনক৷ পেট্রল-ডিজেলেরও সঙ্কট নেই৷ বুধবার বিকেলের পর থেকে বরাক নদীর জল বাড়েনি৷ কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় নদীবাঁধ ভাঙনে উদ্বেগে শিলচর শহরের মানুষ৷ হাইলাকান্দি জেলার পাঁচগ্রামে বরাক নদীর জলস্রোত জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ ফলে সড়কে যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ মিজোরাম, মণিপুরের রাস্তায় বুধবারই যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল৷ পাঁচগ্রামের জলের জন্য ত্রিপুরার গাড়িও শিলচরে আসতে পারছে না।