নিজের আবাস থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অচেনা বনে ফিরে গেল সন্তানহারা হস্তিনী। অসমে রানির জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র
উজানি অসমের বন্যায় ফুঁসতে থাকা নদী পার হওয়ার সময় ছিটকে গিয়েছিল তার বাচ্চা। গাছের গুঁড়ি, পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে নষ্ট হয়ে যায় তার এক চোখ। শেষ পর্যন্ত সেই হস্তিনী ভাসতে ভাসতে আড়াইশো কিলোমিটার পার করে এসে পৌঁছল কামরূপ জেলায়। পাঁচ দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার পশু চিকিৎসকের দল ও অসম বন দফতর হাতিটিকে উদ্ধার করল।
দলের নেতৃত্বে থাকা ভাস্কর চৌধুরী জানান, ১০ জুলাই দরং জেলায় ওরাং জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম অংশে প্রথম বার ব্রহ্মপুত্রে হাতিটিকে দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি কামরূপের মির্জার কাছে দখলাঘাটের বানভাসি গ্রামে ফের হাতিটির দেখা মেলে। বন দফতর কমিটি গড়ে দেয় হাতি উদ্ধারে। দেখা যায়, হস্তিনীটি স্তন্যদাত্রী ও আঘাতের ফলে বাঁ চোখে দৃষ্টিশক্তি নেই। ক্লান্ত, ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে সে। হাতিটির হাত থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচাতে তিনটি গ্রাম খালি করতে হয়। হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয় তিন বার। কারণ সে জলের কাছে চলে যাচ্ছিল। গুলি লাগলে শরীরের গরম খুব বেড়ে যায়। তাই জলে নেমে অজ্ঞান হলে তাকে বাঁচানো যেত না।
শেষ পর্যন্ত পাঁচ দিনের চেষ্টায় কয়েকটি ভাঙাচোরা গুদামঘর ও ফাঁকা জমি থাকা এলাকায় তাকে আনা হয়। ব্যবহার করা হয় তিনটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুনকি হাতি।
এর পর পশুচিকিৎসকেরা তাঁকে ঘুমপাড়ানি গুলি করেন। আশপাশের দেওয়াল ভেঙে সেখানে আনা হয় এক্সক্যাভেটর। পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় হাতিটিকে বেঁধে ট্রাকে তোলা হয়। ছেড়ে আসা হয় রানির জঙ্গলে। ঘুম ভাঙার পরে সে টালমাটাল পায়ে সরু জলধারা পার করে জঙ্গলে ঢুকে যায়।