Electric Vehicle

Electric Vehicle: দু’বছরে পেট্রলচালিত গাড়ির সমান হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম, মন্ত্রীর দাবি কতটা সঠিক

২০৩০-এর মধ্যে ৩০% ব্যক্তিগত গাড়ি, ৭০% বাণিজ্যিক গাড়ি, ৪০% বাস এবং ৮০% দু’চাকার গাড়িকে বিদ্যুৎচালিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৫৮
Share:

দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতীকি ছবি।

ভয়াবহ দূষণের কবলে ধুঁকছে রাজধানী দিল্লি। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে অকাল বর্ষার দাপটে কখনও ডুবছে চেন্নাই, আবার কখনও মেঘ ভাঙা বান ডাকছে হিমালয়ের কোলে। প্রকৃতির রুদ্ররোষ ইদানীং যেন রোজকার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পিছনে মূল কারণ হিসাবে মাত্রাছাড়া পরিবেশ দূষণকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির দামে।

বিদ্যুতের দাম পেট্রল-ডিজেলের দামের তুলনায় অনেকটাই সস্তা। তার মূল কারণ, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বিমার পরিমাণ এখনও অনেকটাই বেশি। এবং বিদ্যুৎচালিত গাড়ি যে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি দিয়ে চলে, তার দাম আকাশছোঁয়া। স্বভাবতই গাড়ির দামও বেশি।

Advertisement

এই অবস্থায় আশার কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি। কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করেছেন, দু’বছরের মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির দাম হবে পেট্রল চালিত গাড়ির সমান। এই প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দিয়েছেন দ্বিচক্রযানের। সরকারি হস্তক্ষেপের পর ইদানীং পেট্রলচালিত এবং বৈদ্যুতিক দ্বিচক্রযানের দাম প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। যদিও চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে পেট্রল ও বিদ্যুৎচালিত গাড়ির পার্থক্য এখনও অনেকটাই।

ভারত ২০৩০-এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি, ৭০ শতাংশ বাণিজ্যিক গাড়ি, ৪০ শতাংশ বাস এবং ৮০ শতাংশ দু’চাকা, তিন চাকার গাড়িকে বিদ্যুৎচালিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে গডকড়ির এই দাবি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisement

গডকড়ির দাবিকে পাশে সরিয়ে রেখে দেখা যাক, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি জনপ্রিয় করতে কী কী পদক্ষেপের কথা ভাবছে তাঁর মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ই-অমৃত’ পোর্টাল বলছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য গোটা দেশে ৯৩৪টি চার্জিং পয়েন্ট ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে দাবি সরকারের। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলে বাড়তি সুযোগ সুবিধা তো আছেই।

দেখে নেওয়া যাক, চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে পেট্রল ও বিদ্যুৎচালিত গাড়ির দামের ফারাক কী রকম।

এই মুহূর্তে দেশে সর্বাধিক বিক্রিত বিদ্যুৎচালিত গাড়ির নাম ‘টাটা নেক্সন ইভি’। এই গাড়িটির এক্স-শোরুম দাম ১৪ লক্ষ টাকার আশেপাশে। অন্য দিকে পেট্রলচালিত ‘মারুতি সুজুকি সুইফ্ট’-এর প্রাথমিক মডেলের দাম আনুমানিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। পেট্রলচালিত ‘হুন্ডাই ক্রেটা’-এর আনুমানিক দাম ১০ লক্ষ টাকা।

চার চাকার গাড়িতে দামের এতটা পার্থক্য হলেও দু’চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে কিন্তু ফারাক ক্রমেই কমছে। জুলাই মাসে শুরু হওয়া ত্রৈমাসিকে দেশে বিদ্যুৎচালিত ‘হিরো ইলেকট্রিক অ্যাট্রিয়া এলএক্স’ স্কুটারের দাম ৬৩ হাজার টাকার আশেপাশে। এই স্কুটারটি এক বার পুরো চার্জ দিলে ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সর্বোচ্চ গতি ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ‘আথের ৪৫০এক্স’-এর দাম ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকার আশেপাশে। এই স্কুটারটির সর্বোচ্চ গতিবেগ অনেকটাই বেশি। সেই তুলনায় পেট্রল চালিত ‘হন্ডা অ্যাক্টিভা’-র দাম ৭২ হাজারের আশেপাশে। পেট্রলচালিত ‘হিরো স্‌প্লেন্ডার’-এর দাম ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা।

উপরের হিসেব থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, চার চাকার গাড়ির দামে অনেকটা ফারাক থাকলেও, দু’চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ফারাক অনেকটাই কমে এসেছে। মন্ত্রীর দাবি চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রেও আগামী দু’বছরের মধ্যে সেই ফারাক আর থাকবে না।

এ বার আসুন দেখে নেওয়া যাক, প্রতি কিলোমিটার পথ চলার ক্ষেত্রে ঠিক কত খরচ। এ ক্ষেত্রে পেট্রলের দাম প্রতি লিটার ১০০ টাকা ধরা হচ্ছে। বিদ্যুতের এক ইউনিটের সর্বাধিক দাম ১০ টাকা। এই হিসেবে পেট্রল চালিত দু’চাকার গাড়িতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির তুলনায় ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি। আর চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে পেট্রলচালিত গাড়ির খরচ বিদ্যুতের গাড়ির তুলনায় অন্তত ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি।

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী দাবি করেছেন প্রতি কিলোমিটারে পেট্রলচালিত গাড়়ির পিছনে খরচ ১০ টাকা, ডিজেল চালিত গাড়ির খরচ ৭ টাকা। সেখানে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে সেই খরচ মাত্র ১ টাকা।

এই সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মন্ত্রীর দাবিতে ভুল কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁরাও বলছেন, বিদ্যুতের গাড়িই বিকল্প। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারি হস্তক্ষেপে দু’চাকার বিদ্যুৎচালিত বাইকের দাম পেট্রলচালিত বাইকের কাছাকাছি পৌঁছেছে, তেমনই কি চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রেও ঘটবে? সে দিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে সরকার। মন্ত্রী দাবি করেছেন, বিশ্ব জুড়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির দাম কমছে। ফলে আগামী দিনে পেট্রল গাড়ির দামেই, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি পাওয়া যাবে, আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু তা কি মাত্র দু’বছরের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব? প্রশ্ন থাকছেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement