Electoral Bonds

নির্বাচনী বন্ড: অধ্যাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে মোদী সরকার?

নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম আইনজীবী কপিল সিব্বলের দাবি, এতে বিজেপির মুখোশ খুলে যাবে। কারণ, কেউ বিনা কারণে বিজেপিকে কোটি কোটি টাকা দেয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কোন রাজনৈতিক দল গত পাঁচ বছরে কোন শিল্প সংস্থার থেকে কত টাকা চাঁদা পেয়েছে, তা মার্চ মাসেই প্রকাশ্যে আসতে চলেছে। আর সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে বিজেপি-বিরোধী শিবির মনে করছে, এতে বিজেপিই সব থেকে অসুবিধায় পড়বে। কারণ, তাদের মতে, মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড চালু করার পর থেকে তার সব থেকে বেশি ফায়দা তুলেছে বিজেপিই।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকার কি অধ্যাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে! বিজেপি নেতৃত্ব তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলের বক্তব্য, রায় পড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

যদিও ঘরোয়া ভাবে বিজেপির অনেক নেতাই স্বীকার করে নিচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত তাঁদের খুশি করেনি। বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, সরকারের উচিত, শীর্ষ আদালতের ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করে অধ্যাদেশ আনা। যাতে আগের ব্যবস্থা বহাল থাকে। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘সংস্কারমুখী পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচনী বন্ড এনেছিল সরকার। মূলত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে এবং নির্বাচনে নগদ টাকার ব্যবহার রুখতে ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তা ছাড়া, কিছু দাতা নিজেদের পরিচয় গোপন করার পক্ষে ছিলেন, তাঁদের কথা ভেবেই বন্ড নিয়ে এসেছিল সরকার।’’

Advertisement

মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড চালু করার পরে বিরোধী শিবির থেকে অভিযোগ উঠেছিল, সরকারে থাকার সুবাদে বিজেপি কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে নানা সুবিধা পাইয়ে দিয়ে গোপনে তাদের থেকে চাঁদা আদায় করছে। আর শাসকদলের বেশি অর্থ পাওয়া নিয়ে বিজেপির ব্যাখ্যা, যে রাজ্যে যে দলের সরকার থাকে, তারাই অনুদান বেশি পায়। তেমনি কেন্দ্রে যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারাই অনুদান বেশি পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে গত পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। সে সময়ে সব অনুদান তো কংগ্রেস পেয়েছিল। তখন তো সব দলের জন্য সমান রাজনৈতিক চাঁদার কথা কারও মনে পড়েনি।

২০১৭ সালের বাজেটে নির্বাচনী বন্ডের ঘোষণা হয়েছিল। ২০১৮-র জানুয়ারি মাসে নির্বাচনী বন্ড চালুর বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে মোট ১২,০০৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে। এর প্রায় ৫৫ শতাংশ বা ৬,৫৬৪ কোটি টাকা বিজেপির সিন্দুকে ঢুকেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিজেপি-সহ সব দলকে এই কোটি কোটি টাকা চাঁদা কে দিয়েছে, ১৩ মার্চের মধ্যেই তা প্রকাশ্যে আনবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম আইনজীবী কপিল সিব্বলের দাবি, এতে বিজেপির মুখোশ খুলে যাবে। কারণ, কেউ বিনা কারণে বিজেপিকে কোটি কোটি টাকা দেয়নি। একই মত পি চিদম্বরমের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি কর্পোরেট ও বড়লোকদের চাঁদার ৯০ শতাংশ নিজের ঝুলিতে পুরেছিল। সবাই জানুক, কবে, কাকে চাঁদা দেওয়া হয়েছে। তার পরে মানুষ জানতে চাইবেন, কেন এই চাঁদা দেওয়া হয়েছে। তার পরে মানুষই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

তবে নির্বাচনী বন্ড তুলে দেওয়ার পরেও সব রাজনৈতিক দলের কাছে সমান চাঁদা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সব দল লড়াইয়ের ময়দানে সমান সুযোগ পেল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ চিদম্বরমের মতে, এত দিন শাসকদল বাড়তি সুবিধা পাচ্ছিল। এ বার সব দল সমান সুযোগ পাবে। কিন্তু তাঁর ছেলে, লোকসভা সাংসদ কার্তি চিদম্বরমের মতে, বিজেপি নির্বাচনী বন্ডের চাঁদার বেশির ভাগই পকেটে পুরে ফেলল। তা হলে আর সমান সুযোগ কোথায় হল!

২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে যত টাকার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, তার মাত্র ৯.৫ শতাংশ, বা ১,১৩৫ কোটি টাকা কংগ্রেস পেয়েছে। আঞ্চলিক দল হলেও তৃণমূল পেয়েছে ১,০৯৬ কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্টে অন্যতম মামলাকারী সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘কে বন্ডের মাধ্যমে কাকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে এলে শাসকদলগুলির গোপন আঁতাঁত প্রকাশ্যে আসবে।’’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার নির্বাচনী সংস্কারের দাবি করেছেন। কোথা থেকে টাকা আসছে, দলের অর্থের উৎস কী, তা মানুষকে জানাতে হবে।

আজ সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণার পরেই মামলার অন্যতম আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এজলাসের মধ্যেই রায়কে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এতে দেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আসবে। নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়ালকারী কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, এ সবের জন্য বাইরে সংবাদমাধ্যম রয়েছে। তবে ভূষণ মনে করছেন, নির্বাচনী বন্ড তুলে দিলেও ভোটে কালো টাকার খেলা দূর হবে না। তার জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নগদে লেনদেন বন্ধ করতে হবে। ভোটের খরচে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement