শ্রীনগরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ। শনিবার পিটিআইয়ের ছবি।
রাত পোহালেই বিহার ভোটের ফল বেরোবে। কিন্তু সেই ভোট যুদ্ধ সরিয়ে ফের দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করা শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ শ্রীনগরে দাঁড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য উপুড়হস্ত হলেন তিনি। তবে মুফতি মহম্মদ সইদের ইচ্ছে মেনে পাকিস্তানের প্রতি কোনও শান্তির বার্তা দিলেন না। সেটা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না বলেই ধারণা রাজনীতিকদের। তবে এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করে ওমর আবদুল্লার মতো বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, কাশ্মীরের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিহারের ভোটপর্বের মধ্যেই ঘরোয়া আড্ডায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিহারে যদি বিজেপি ভোটে হেরে যায়, তা হলে কী হবে? জবাবে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘কী আর হবে?
নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে দেশ চালাচ্ছিলেন, সে ভাবেই চালিয়ে যাবেন। আর সভাপতি হিসেবে আমিও দলের কাজ চালিয়ে যাব।’’
দিল্লিতে হারের পরেও এ বারের বিহারের ভোটে নরেন্দ্র মোদীকেই মুখ হিসেবে তুলে ধরেছিল দল। কিন্তু সেই ভোটের ফল প্রকাশের এক দিন আগে জম্মু-কাশ্মীরের মন জয় করতে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, দেশ চালানোই তাঁর কাজ। বিহারে জিতলেও তাঁকে দেশ চালাতে হবে। হেরে গেলেও। সে কারণেই তিনি গত কাল বুঝিয়েছিলেন, শিল্পমহল অধৈর্য হলেও এক ঝটকায় বড় মাপের আর্থিক সংস্কার করবেন না তিনি। সংস্কার প্রক্রিয়া এক লম্বা দৌড়। আর আজ কাশ্মীরে গিয়ে জানিয়েছেন, এই আশি হাজার কোটি টাকার প্যাকেজই শেষ নয়। এটা সবে শুরু। কাশ্মীরকে আধুনিক, উন্নত ও সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য দিল্লির কোষাগারে কখনও টাকার ঘাটতি হবে না।
জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি-পিডিপি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ সম্প্রতি দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। বিজেপি সূত্রে খবর, তিনি তখনই কাশ্মীরে জনসভা করতে অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই সভায় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা ও পাকিস্তানের প্রতি শান্তির হাত বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুফতির একটি কথা রেখেছেন মোদী। উন্নয়নের জন্য ৮০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরে সড়ক তৈরির জন্যও ৩৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, কাশ্মীর তাঁর মন জুড়ে রয়েছে। ভূস্বর্গ নিয়ে কারও পরামর্শের তাঁর প্রয়োজন নেই। মোদীর মতে, পারভেজ রসুলের মতো ক্রিকেটার যে রাজ্য থেকে আসেন সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হওয়া উচিত। কাশ্মীরিদের মন জয় করতে তিনি অস্ত্র করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ‘‘কাশ্মীরিয়ত, জামহুরিয়ত, ইনসানিয়ত’’-এর স্লোগানকে। অর্থাৎ, কাশ্মীরি ঐতিহ্য, গণতন্ত্র ও মানবিকতা।
২০০৪ সালে কাশ্মীরি ঐতিহ্য, গণতন্ত্র ও মানবিকতার এই স্লোগান দিয়েই পাকিস্তানকে ফের আলোচনার টেবিলে ফেরার বার্তা দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। মোদী অবশ্য পাকিস্তান বা বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়তের কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, মুফতি যতই দাবি করুন, এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দেওয়া মোদীর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজপেয়ীর স্লোগানের মাধ্যমে অনেক কিছুই বলতে চেয়েছেন মোদী। কাশ্মীরে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে, মানবিক মুখ তুলে ধরতে মোদী সরকার আগ্রহী তা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপি এখনও কাশ্মীরিয়ত বা কাশ্মীরের আদি সুফি সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যেই বিশ্বাস করে। রাজনীতিকদের মতে, এ ভাবে অসহিষ্ণুতা নিয়ে চলতি বিতর্কেও পরোক্ষে অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু বিরোধীদের মতে, মোদীর এই জনসভা কার্যত অর্থহীন। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার দাবি, এই সভা থেকে পাকিস্তান-হুরিয়তের সঙ্গে আলোচনার কথা শুনতে চেয়েছিল কাশ্মীর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সমস্যার কথা পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়েছেন। প্যাকেজ দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে না।
বেরোতেই আটক গিলানি
শনিবার কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা -মিছিলের জবাবে হুরিয়ত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলি গিলানি একটি পাল্টা মিছিল বার করার চেষ্টা করলে তাঁকে আটক করা হয়। তিনি বাড়ি থেকে বার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আটক করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে কাশ্মীরের বিভিন্ন নেতার মধ্যে। এই ঘটনাকে ‘অগণতান্ত্রিক গুন্ডামি’ বলে আখ্যা দেন হুরিয়তের মুখপাত্র। ‘মিলিয়ন মার্চ’ নামে ওই মিছিলে সহযোগিতা জানানোর জন্য এক পরিবারের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর জেরেই জায়গায় জায়গায় প্রতিবাদী ও বিভিন্ন আইনি সংস্থার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষের মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। তা রুখতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে প্রাণ হারান এক ১৮ বছরের যুবক।