কেন্দ্রের আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন কাশ্মীরে উপ-নির্বাচন করতে এগিয়েছিল বলে দাবি করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কমিশনের পাল্টা দাবি, ভোট নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মত মেনে চলার দায় তাদের নেই। গত কাল শ্রীনগরে গোলমালের জেরে অনন্তনাগ লোকসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন ১২ এপ্রিল থেকে পিছিয়ে ২৫ মে করতে বাধ্য হয়েছে কমিশন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি, তারা নির্বাচন কমিশনকে এখনই উপ-নির্বাচন না করতে অনুরোধ করেছিল। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহর্ষি চিঠি লিখে কমিশনকে জানান, উপত্যকায় এখন মূলস্রোতের রাজনৈতিক দল ও দিল্লি-বিরোধী মনোভাব প্রবল। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশন আমাদের কথায় পাত্তা দেয়নি। ফল কী হয়েছে তা সবাই জানে।’’ কমিশন সূত্রের পাল্টা দাবি, তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কথা শুনতে বাধ্য নয়। কোথাও ভোট করা যাবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশনই। কাশ্মীরে সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। ফলে উপ-নির্বাচন করা যাবে বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।
কাশ্মীরে হিংসা-বিক্ষোভের জেরে ভোট কার্যত ভন্ডুল হয়ে যাওয়ায় রাহুল গাঁধী সরাসরি বিঁধেছেন নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর দাবি, ‘‘বছরের পর বছর ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপরে কাশ্মীরের মানুষের আস্থা তৈরি করা হয়েছিল। রাজ্যে বিজেপি-পিডিপি সরকারের তিন বছরেই সেই আস্থা ভেঙে গিয়েছে। কাশ্মীরে মোদী সরকারের নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ।’’
গত কালের হিংসা নিয়ে একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি। গতকালই শ্রীনগরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের যৌথ প্রার্থী ফারুক আবদুল্লা দাবি করেন, ‘‘রাজ্য সরকারই চায় না মানুষ ভোট দিন।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স সূত্রের দাবি, উপত্যকায় পিডিপি-র বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই জঙ্গি ও হুরিয়তের সাহায্য নিয়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে ভোটে জিততে চাইছে মেহবুবার দল। অন্য দিকে পিডিপি-র দাবি, রাজ্য সরকারকে আরও প্যাঁচে ফেলতে চাইছে বিরোধী দলগুলি। তাই তারাই জঙ্গি-হুরিয়তের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হিংসা ছড়িয়েছে।
পাকিস্তান যে ভাবে এই ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে তাতে পুরো ঘটনায় আইএসআইয়ের হাত থাকার ইঙ্গিত পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, উপত্যকায় কয়েকটি নির্বাচনে উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন মানুষ। তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলেও ধরেছিল ভারত। ফলে এ বার ভোট প্রক্রিয়াকেই নিশানা করেছে আইএসআই। সে কাজে যে তারা বেশ কিছুটা সফল হয়েছে তাও ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা।
আজও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি কাশ্মীর। শ্রীনগরের টেঙ্গপোরায় বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথর লাগে একটি মিনিবাসে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিদ্যুতের স্তম্ভে ধাক্কা মারে বাসটি। মারা যান ৫৫ বছরের চালক আলি মহম্মদ দাগা। শোপিয়ান ও অনন্তনাগে দু’টি সরকারি স্কুলে আগুন ধরানো হয়েছে।