মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোটের চার মাসের মাথায় আবার যুযুধান এনডিএ এবং ‘ইন্ডিয়া’। এ বার দু’টি বিধানসভা ভোটে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং হরিয়ানার ৯০টি করে আসনে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হবে তিন দফায়। হরিয়ানায় এক দফায়। জম্মু ও কাশ্মীরে ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর ভোটগ্রহণ হবে। হরিয়ানায় শুধু ১ অক্টোবর। দু’টি বিধানসভা ভোটেরই একসঙ্গে গণনা হবে ৪ অক্টোবর।
২০১৪ সালের পরে আবার জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে। এর মধ্যে অবশ্য পূর্ণ রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট কেন্দ্র সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করেছিল। সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে ভাগ করা হয়েছিল। তার তিন বছর আগেই অবশ্য রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বিধানসভা। ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে শেষ বার বিধানসভা ভোট হয়েছিল অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে। গত ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ কেন্দ্র এবং কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট করাতে হবে।
৩৭০ বাতিলের পরে জম্মু ও কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাসের দায়িত্বে থাকা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা আসনসংখ্যা ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছিল গত বছর। সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টি বেড়েছে জম্মুতে (৩৭ থেকে ৪৩) এবং একটি কাশ্মীরে (৪৬ থেকে ৪৭)। কমিশন জানিয়েছে, ২০১১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও অভিযোগ উঠেছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হিন্দুপ্রধান জম্মুতে মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকার তুলনায় বেশি আসন বাড়ানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, আগামী ২০ অগস্ট প্রকাশিত হবে জম্মু ও কাশ্মীরের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এরই মধ্যে ভোট ঘোষণার আগে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ৮৮ জন সরকারি আধিকারিককে বদলি করায় প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
২০১৯ সালের অক্টোবরে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় বিধানসভা ভোট হয়েছিল। হরিয়ানার বিধানসভার মেয়াদ ছিল ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। মহারাষ্ট্রে ২৬ নভেম্বর। কিন্তু এ বার হরিয়ানায় ভোটের দিন এগিয়ে আনল কমিশন। জম্মু ও কাশ্মীরের মতোই হরিয়ানা বিধানসভায় আসনসংখ্যা ৯০। সেখানে অবশ্য এক দফাতেই ভোট হচ্ছে। ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে ত্রিশঙ্কু হয়েছিল ৯০ বিধানসভা আসনের হরিয়ানা। এর পরে আইএনএলডি-ছুট দুষ্মন্ত চৌটালার দল জেজেপির ১০ বিধায়কের সমর্থনে সরকার গড়েছিল ৪০টিতে জেতা বিজেপি।
কিন্তু চলতি বছরে লোকসভা ভোটের আগে সে জোট ভেঙে যায়। এ বারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলই হরিয়ানায় পাঁচটি করে আসনে জিতেছে। লোকসভায় আপ এবং কংগ্রেস আসন সমঝোতা করলেও এ বার দু’দল আলাদা ভাবে লড়ছে। চার মাস আগে লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে বিরোধী জোট ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র কাছে বিজেপি, শিন্ডেসেনা, অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপির জোট পর্যুদস্ত হওয়ার কারণেই এই দফায় সে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হচ্ছে না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা।