মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। ছবি পিটিআই।
জয় প্রত্যাশিতই ছিল। তবে তার আগেই মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থা ভোটের বক্তৃতা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। টেনে আনলেন নৌকাডুবিতে তাঁর ১১ বছরের পুত্র আর ৭ বছরের কন্যার মৃত্যুর প্রসঙ্গ। সেই চরম সঙ্কটের দিনে পাশে থেকে কী ভাবে তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন শিবসেনারই এক নেতা আনন্দ দীঘে, সে কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে উদ্ধব শিবিরের আনা বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগেরও আজ জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আস্থা ভোটে শিন্ডের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৬৪টি, বিপক্ষে ৯৯টি। তবে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় শিবসেনার পরিষদীয় দলকে ঘিরে জটিলতা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। শিন্ডে শিবিরের সমর্থনে থাকা মুখ্যসচেতককে বিধানসভার স্পিকারের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা করেছেন উদ্ধবরা। এ নিয়ে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের সামনে সওয়াল করেন। আগামী ১১ জুলাই মামলার শুনানি নির্ধারিত হয়েছে। ওই দিন মহারাষ্ট্রের সঙ্কট নিয়ে আরও দু’টি মামলা উঠবে শীর্ষ আদালতে।
এ দিকে, আস্থা ভোটের বক্তৃতায় আবেগাপ্লুত একনাথ আজ বলেন, ‘‘আমার পরিবারকে ওরা আক্রমণ করছে। আমার মা মারা গেছেন, বাবা বেঁচে আছেন। বাবা-মাকে বেশি সময় দিতে পারিনি। আমি বাড়ি ফেরার সময় ওরা ঘুমিয়ে থাকত। আর আমি ঘুমোলে কাজে চলে যেত। আমার ছেলে শ্রীকান্তকেও বেশি সময় দিতে পারিনি। আমার দুই সন্তান মারা গেছে। সেই সময় আনন্দ দীঘে আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। আমি সব সময় ভাবতাম, বেঁচে থাকার কি আছে?’’ নৌকাডুবিতে ১১ বছরের পুত্র আর ৭ বছরের কন্যার মৃত্যুর পর শিবসেনা নেতা আনন্দ দীঘে কী ভাবে তাঁকে চোখের জল মুছিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং এক সময় বিধানসভার পরিষদীয় দলের নেতা করেছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে শিন্ডে আজ দাবি করেন, কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠনের সময়েও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু সেদিন বাধা দিয়েছিলেন এনসিপি-র অজিত পওয়ার। একনাথের কথায়, ‘‘অজিত পওয়ার অবশ্য আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। তবে বিরোধিতা আসছে আপনার দলের ভিতর থেকেই। ফলে শরদ পওয়ারের প্রস্তাব মতো উদ্ধব ঠাকরেকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। আমি তা মন থেকে মেনেও নিয়েছিলাম।’’
কী কারণে বিদ্রোহ, তা নিয়েও যুক্তি হাজির করেছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধী বেঞ্চের উদ্দেশে শিন্ডে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কারও বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। তবে শিবসেনার অনেক বিধায়কই নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তার মধ্যে ছিলেন। কারণ, তাঁরা মনে করছিলেন বিজেপিই আমাদের স্বাভাবিক শরিক।’’ উদ্ধবমুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় শিবসেনার কোনও লাভ হয়নি বলেই দাবি করেন শিন্ডে। বলেন, ‘‘বিশ্বাসঘাতকতা আমার রক্তে নেই। তবে ভোটের ফলাফল নিয়ে আমাকে ভীষণ ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। আর সহ্য করতে পারছিলাম না।’’ রাজ্যসভার সাম্প্রতিক ভোট নিয়ে শিবসেনার অন্দরে যে টানাপড়েন সেদিকে ইঙ্গিতকরেন মুখ্যমন্ত্রী।
আস্থাভোটে শিন্ডের জয়ের পরেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে অভিযোগ করেছেন, শিবসেনাকে শেষ করতে চক্রান্ত করছে বিজেপি। উদ্ধব শিবসেনার জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বিজেপি-একনাথ জোটকে অন্তর্বর্তী ভোটে যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। বলেন, ‘‘আমরা জনতার আদালতে যেতে তৈরি।’’ আস্থাভোটে জিতেই অবশ্য মহারাষ্ট্রের মানুষকে খুশি করতে পেট্রলেরউপর কর কমিয়ে দিয়েছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে।