পি চিদম্বরম।
এয়ারসেল-ম্যাক্সিস আর্থিক তছরুপ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়ে জানাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বেআইনিভাবে বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। রীতিমতো ষড়যন্ত্র করেছিলেন যাতে ছেলে কার্তির ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
চিদম্বরম ছাড়া আরও ৮ জনের নাম রয়েছে চার্জশিটে। যার মধ্যে রয়েছে ভাস্কররমণ এবং ৪টি ম্যাক্সিস সংস্থা।বৃহস্পতিবার চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় ইডির প্রতিনিধি হিসাবে সিবিআই আদালতে হাজির ছিলেন আইনজীবী এনকে মাট্টা এবং নীতেশ রাণা। বিশেষ বিচারপতি ওপি সাইনির এজলাসে আগামী ২৬ নভেম্বর বিষয়টির শুনানি হবে।
মনমোহন সিংহ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তদন্তকারীদের দাবি, সেই সময় বেআইনিভাবে ৩৫০০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন দেন তিনি। সুবিধা পাইয়ে দেন মালয়েশিয়ার ম্যাক্সিস সংস্থাকে। যার পর ২০০৬ সালে টেলিকম সংস্থা এয়ারসেল কিনে নেয় তারা। তবে এই বিনিয়োগের প্রস্তাব সরাসরি আসেনি। ম্যাক্সিসের সহায়ক সংস্থা, মরিশাসের গ্লোবাল কমিউনিকেশন সার্ভিসেস হোল্ডিংস মারফত এয়ারসেলে বিনিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, যুযুধান দুই সেনাপতিকে ছুটিতে পাঠাল কেন্দ্র
কিন্তু ওই প্রক্রিয়া বিদেশি বিনিয়োগ আইন মোতাবেক হয়নি।৬০০ কোটির ঊর্ধ্বে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ারই ছিল না প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন অর্থ দপ্তরের ক্যাবিনেট কমিটিই একমাত্র অনুমোদন দিতে পারত। তা সত্ত্বেও কোন অধিকারে ওই চুক্তিতে সায় দেন চিদম্বরম, প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দাদের দাবি, কার্তি চিদম্বরম ও তাঁর সহায়কদের ইমেল ঘেঁটে বহু তথ্য হাতে এসেছে। যাতে দেখা গিয়েছে, অর্থ দপ্তরের অনুমোদন মিললে এয়ারসেল টেলিভেঞ্চার্স লিমিটেডের তরফে ২৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়া হয় একটি সংস্থাকে । ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কার্তি চিদম্বরম।
বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একাধিক কংগ্রেস নেতাকেও তাঁকে সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ওউত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার চিদম্বরম। মোদী সরকারের হাতের পুতুল হয়ে দাঁড়িয়েছে ইডি। তাদের নির্দেশ মতো কাজ করছে। সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই গোয়েন্দাদের লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অলোক বর্মার বাড়ির সামনে ধৃতেরা আসলে ‘গুপ্তচর’!
এয়ারসেল-ম্যাক্সিস কাণ্ডে এর আগে, ১৩ জুন পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিটটি দায়ের করে ইডি। তাতে বলা হয়, দু’টি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ছিল কার্তির হাতে। যারা এয়ারসেল-ম্যাক্সিস তছরুপ কাণ্ডে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিল। পরে একটি অতিরিক্ত চার্জশিটও দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। তার প্রায় চারমাস পর, বৃহস্পতিবারপ্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় চার্জশিটটি দায়ের হলো।