প্রতীকী ছবি।
উৎসবের মরসুমে বাড়তি কেনাকাটায় ভর করে অক্টোবরের পর নভেম্বরেও জিএসটি আদায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গেল। কিন্তু চলতি মাসে ফের বাজার ঝিমিয়ে পড়ায় জিএসটি আদায় যে হোঁচট খেতে পারে, সেই ইঙ্গিতও মিলল। কারণ, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরেই জিএসটি আদায় কিছুটা কমেছে। আবার গত নভেম্বরের তুলনায় এ বছরের নভেম্বরে আদায় বেড়েছে মাত্র ১.৪ শতাংশ।
গত এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে জিডিপি-র সঙ্কোচন হয়েছিল ২৩.৯ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে সঙ্কোচনের পরিমাণ কমে হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান দেখিয়ে মোদী সরকারের দাবি, কোভিড-লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা, অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির ছবি আরও খারাপ হতে পারে। তাঁদের মতে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে সরকারকে আরও খরচ বাড়াতে হবে। যাতে বাজারে চাহিদা বাড়ে।
দুর্গাপুজো-দশেরা-দীপাবলির আগে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাড়তি কেনাকাটা হয়েছে। বহু দিন লকডাউনের জেরে বন্ধ থাকার পরে বাজারহাট খোলার পরে কেনাকাটা অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল। ফলে চলতি অর্থ বছরে অক্টোবরেই প্রথম বার জিএসটি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি আদায় হয়। আজ অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, নভেম্বরেও জিএসটি থেকে ১,০৪,৯৬৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, অক্টোবরে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৯২ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯-এর নভেম্বরের তুলনায় এই নভেম্বরে জিএসটি আদায় বেড়েছে মাত্র ১.৪ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধির পরিমাণ ৮ শতাংশ। আবার খাস দিল্লিতে আদায় ১৫ শতাংশ কমেছে। লগ্নি উপদেষ্টা সন্দীপ সাভরওয়ালের মতে, ‘‘অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে এত হইচই, উৎসবের মরসুমে বাড়তি চাহিদা ইত্যাদির পরেও গত বছরের তুলনায় জিএসটি আদায় প্রায় একই রকম থাকার অর্থ, অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্র সামান্য চাঙ্গা হলেও অন্যান্য ক্ষেত্র এখনও সমস্যার মধ্যে রয়েছে।’’
যদিও আজ অর্থ মন্ত্রক দাবি করেছে, গোটা বিশ্বের মতো ভারতেও কোভিডের ধাক্কা লেগেছে। তা সত্ত্বেও সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপে ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে লগ্নিকারীদের মনোভাব ইতিবাচক রয়েছে। সরকারের যুক্তি, বিদেশি অর্থিক সংস্থাগুলি নভেম্বরে ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি লগ্নি করেছে। বিদেশি প্রত্যক্ষ লগ্নি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি ডলার ছুঁয়েছে। যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অর্থ বছরের প্রথমার্ধে ৪.৪৩ লক্ষ কোটি টাকার কর্পোরেট বন্ড ছাড়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন আজ ফের বলেন যে, ভারত এমন এক জাঁতাকলে পড়েছে, যেখানে আগামী ৪-৫ বছরে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের আশেপাশেই থাকবে। ৮-১০ শতাংশ দুরের কথা, ৬-৭ শতাংশ বৃদ্ধি ছোঁয়াও অসম্ভব।