শক্তিরূপেন সংস্থিতা!
সময় বদলেছে। প্রেক্ষাপটও বদলেছে। বদলেছে শত্রু বিনাশের ধরনধারণও। কিন্তু গত ১৩৮ বছরের সেই ঐতিহ্য থেকে এক পা-ও নড়েনি ঝাড়খণ্ড পুলিশ বাহিনীর গোর্খা ইউনিট। কোনও বিগ্রহ নয়, এখানে পুজো হয় অস্ত্রের। মঞ্চে সাজানো থাকে এ কে ফর্টি সেভেন, রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, কার্বাইন! দুর্গার হাতের শঙ্খ–চক্র-বজ্র-ত্রিশূলের আধুনিক সংস্করণ।
এই পুজোর প্রধান পুরোহিত সহদেব উপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘অস্ত্রগুলি শুধু সাজানোই থাকে না। শাস্ত্র মেনে ন’দিন ধরে তার পুজো হয়। প্রত্যেক দিনই নির্দিষ্ট সময়ে শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। আর নবমীর দিন এই অস্ত্রেই হয় ছাগবলি। প্রচলিত বিশ্বাস যে অস্ত্রের শব্দে জেগে ওঠেন মা দুর্গা, খুশিও হন।’’ ঝাড়খণ্ড সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীও সহদেব।
মাওবাদী দমন এবং ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তার কাজে যে সব পরিবারের পুরুষেরা ডিউটি করছেন, ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পুজোয় তাঁদের জন্য প্রার্থনা করেন, মানত করেন বাড়ির মেয়েরা। গত ১৪ বছর ধরে এই পুজোয় যুক্ত অনিতা মোথে। জানাচ্ছেন, ‘‘অস্ত্রের পুজো করার আরও একটি কারণ হল, মাঠে-জঙ্গলে অভিযানের সময়ে যেন যন্ত্র বিগড়ে না যায়। সময়মতো যেন অস্ত্র থেকে গুলি-গোলা বেরোয়।’’ অনিতা জানান, শক্তিপুজোর প্রতীক হিসেবেই অস্ত্রের এই আরাধানা তাঁদের। আবার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ইনস্পেক্টর ধনপ্রসাদ লিম্বুর কথায়, ‘‘আসলে এই পুজোর অন্য একটি দিকও রয়েছে। মাওবাদী এবং দুষ্কৃতীদের বার্তা দেওয়াটাও একটা উদ্দেশ্য।’’
ব্রিটিশরা ১৮৮০ সালে এই গোর্খা বাহিনী তৈরি করে নাম দেয় নিউ রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স। স্বাধীনতার পরে নাম হয় বিহার মিলিটারি পুলিশ। আবার ২০০২-এ নতুন রাজ্য তৈরির পরে ঝাড়খণ্ড আর্মড পুলিশ। তবে নাম বদলালেও পুজোর ঐতিহ্য বদলায়নি। ১৮৮০ সাল থেকেই চলছে অস্ত্র পুজোর পরম্পরা। বাহিনীতে প্রচলিত আছে—এক কম্যান্ডার অস্ত্র পুজোর রীতি পাল্টে মূর্তি পুজো করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মূর্তি মণ্ডপ পর্যন্ত পৌঁছয়নি। মারাত্মক দুর্ঘটনায় বহু লোক রাস্তাতেই হতাহত হন। ভেস্তে যায় পুজো। তার ঠিক পরে পুলিশ শিবিরে মহামারি দেখা যায়। এর পরে বিশ্বাস আরও গেড়ে বসে, অসুর বিনাশের জন্য মা নিজেই অস্ত্রপুজো চাইছেন। তার পরে আর অন্য কথা ভাবেন না কেউ।