Durga Puja 2023

দিল্লির পুজোয় কেদার ছুঁয়ে চন্দ্রযানে স্বর্গের সিঁড়ি 

এই চন্দ্রযান শ্রীহরিকোটার লঞ্চপ্যাড থেকে উড়ছে না। তা পাড়ি দিচ্ছে দিল্লির করোলবাগ পূজা সমিতির প্রাঙ্গণ থেকে। নয়াদিল্লির ব্যবসায়ী এলাকা হিসাবে পরিচিত করোলবাগের ওই পুজো ৮২ বছরে পৌঁছল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:০১
Share:

দিল্লির করোলবাগ পূজা সমিতির মণ্ডপে চন্দ্রযানের আদল, এশিয়াডে সাফল্যের ঝলক। —নিজস্ব চিত্র।

ফের চন্দ্রযান পাঠানোর প্রস্তুতি। শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। প্রতিপদ..দ্বিতীয়া..তৃতীয়া..চতুর্থী...!

Advertisement

এই চন্দ্রযান শ্রীহরিকোটার লঞ্চপ্যাড থেকে উড়ছে না। তা পাড়ি দিচ্ছে দিল্লির করোলবাগ পূজা সমিতির প্রাঙ্গণ থেকে। নয়াদিল্লির ব্যবসায়ী এলাকা হিসাবে পরিচিত করোলবাগের ওই পুজো ৮২ বছরে পৌঁছল। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মূলত সোনার ব্যবসায়ী ও করিগরদের উদ্যোগে প্রথম ওই পুজো শুরু হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে তা ক্রমশ আকার-আয়তনে বেড়েছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে থিমের পুজো করা করোলবাগ পূজা সমিতির এ বারের থিম চন্দ্রযান। তাদের সাধারণ সম্পাদক দীপক ভৌমিক বললেন, ‘‘চন্দ্রযানের সাফল্য তুলে ধরে ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা বাড়ানোর লক্ষ্যেই ওই উদ্যোগ। এর পাশাপাশি পুজোর থিমে জি২০ এবং এশিয়াডের সাফল্যকেও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ পুজোর প্রতিমা সাবেকি। মূর্তির সাজ সবই এসেছে কলকাতা থেকে। ব্যবসায়ী এলাকা হলেও স্থানীয়দের উদ্যোগে গোটা পুজোতেই একেবারে বাড়ির পরিবেশ এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পুজোর কয়েকটা দিন স্থানীয় বাঙালি কচিকাঁচারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। ভোগের ব্যবস্থা থাকে রোজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার কথা রাজ্যসভার প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের। আসার কথা রয়েছে ত্রিপুরার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকেরও।

করোলবাগ পুজো কমিটি যখন মহাকাশ ছুঁতে চাইছে, তেমনই নয়ডা কালীবাড়ির পুজো কমিটি তাদের ৪১তম বর্ষে বানিয়েছে এমন সিঁড়ি, যা পৌঁছে দেবে স্বর্গের ব্রহ্মদ্বারে! কাহিনিতে আছে, স্বর্গের সিঁড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন লঙ্কেশ্বর রাবণ। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। নয়ডার অন্যতম সাবেকি পুজো হল নয়ডা কালিবীড়ির পুজো। অতীতে বেলুড় মঠ কিংবা বদ্রীনাথ মন্দির, দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ির মতো প্রাচীন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়ে এসেছে এই পুজো কমিটি। তাদের সহ-সভাপতি অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এ বছরের পুজো মণ্ডপ ঘিরে আধ্যাত্মিক আবহ তৈরি করতে বেছে নেওয়া হয়েছে ব্রহ্ম দুয়ার থিমকে। স্বর্গের দুয়ারকে ব্রহ্ম দুয়ার বলা হয়। দুয়ারের সামনে মেঘের মধ্যে বসে থাকবে ব্রহ্মা মূর্তি। সেখানে পৌঁছে যাওয়া যাবে সিঁড়ি দিয়ে। মেঘ বা কৃত্রিম ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে স্মোক গানের মাধ্যমে।’’ পুজো কমিটির বক্তব্য, গোটাটাই প্রতীকী। ভাল কাজ করলে স্বর্গলাভের তত্ত্বকেই সিঁড়ি দিয়ে বোঝানো হয়েছে। এই পুজোর এ বার উদ্বোধন করবেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।

Advertisement

গৌরীকুণ্ড থেকে খাড়া চড়াই বেয়ে প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে তবে পৌঁছনো যায় কেদারনাথের মন্দিরে। প্রায় এক দশক আগে হওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে সবার আর পক্ষে সম্ভব হয় না কেদার-দর্শন। তাই এ যাত্রায় গাজ়িয়াবাদের ইন্দিরাপুরমে কেদারনাথ মন্দিরকেই নামিয়ে এনেছে ইন্দিরাপুরম বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি। স্থানীয় শিপ্রা মল সংলগ্ন মাঠে তৈরি হচ্ছে কেদারনাথ মন্দিরের আদলে পুজো মণ্ডপ। দিল্লি সংলগ্ন এলাকার মধ্যে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা বলতে গোড়াতেই নাম উঠে আসে ইন্দিরাপুরমের। পুজো কমিটির সদস্য বিকাশ মোহন সিন্‌হা বলেন, ‘‘আমাদের পুজোর বয়স মাত্র চার বছর। কিন্তু তা বলে আমাদের হেলাফেলা করা যাবে না। প্রথম বছর থেকেই আমাদের পুজো বিভিন্ন পুরস্কার জিতে আসছে। কাজের সূত্রে অনেকেই এখন পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে পারেন না। পুজোর চার দিনে মণ্ডপে যাওয়াটাই আমাদের কাছে ঘরে ফেরা। ভোগ বিতরণ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশ— এটাই আমাদের পুজোর বৈশিষ্ট্য।’’

দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে থিমের দুর্গাপুজোর মধ্যেই সাবেকিয়ানার পরিবেশ ধরে রেখেছে পশ্চিম দিল্লির বিকাশপুরীর দুর্গোৎসব কমিটি। পঞ্জাবি অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু পুজোয় পঞ্জাবি-বাঙালি এক হয়ে ভোগ খান। প্রসাদ বিতরণ করেন। দেন অঞ্জলিও। আমরা সবাই বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের শুভাশীষ আচার্যের কথায়, ‘‘আমাদের পুজো এ বার ৩৩ বছরে পা দিল। স্থানীয় অবাঙালিরাও সমান ভাবে এখানে যোগদান করেন। দুপুরে ভোগ ও প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেমন স্থানীয় বাঙালিরা যোগ দেন, তেমনই মুম্বই ও কলকাতা থেকে শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়। দিল্লির বুকে এ ভাবেই ধরে রাখা হয় বাংলার সংস্কৃতিকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement