টুইটারে এই ছবিই পোস্ট করেন হেমা। ছবি: পিটিআই।
শুধুই ‘ড্রিম গার্ল’ হলে কোনও সমস্যা ছিল না। হেমা মালিনী যে এখন মথুরার সাংসদ। বিজেপির টিকিটে জিতে লোকসভায় এসেছেন। তাঁর এলাকায় যখন গোলাগুলি চলছে, তখন তিনি মোটর বোটে চেপে মুম্বই থেকে মাঢ় আইল্যান্ডে যাচ্ছেন। আর সেই ছবি টুইটারে দিয়ে বলছেন, মুম্বই থেকে মাঢ় আইল্যান্ডে শ্যুটিং করতে যাওয়া এখন কতই না সহজ হয়ে গিয়েছে। ‘এক থি রানি’ ছবিটি তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন হেমা।
আগামী বছর উত্তরপ্রদেশের ভোট। মথুরার ঘটনাকে হাতিয়ার করে আজ বিজেপি অখিলেশ যাদবকে বিঁধে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে শুক্রবার তাতে জল ঢেলে দিয়েছেন সাংসদ হেমা মালিনী! তিনি প্রথমে স্বীকার করেন, বৃহস্পতিবার রাতে মথুরায় পুলিশ ও জবরদখলকারীদের সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্তা-সহ ২৪ জন নিহত হলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিনি এ সবের কিছুই জানতেন না। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘শ্যুটিংয়ে গিয়েছিলাম। কী ভাবে জানব যে এমন ঘটনা ঘটবে? মথুরা থেকে আমাদের লোকেরা জানাল যে ওখানে আমার যাওয়ার দরকার নেই। ওরাই সব সামলে নেবে।’’ তার পরেই টুইটারে হেমা লেখেন, মথুরা থেকে এই তো এলাম। আমাকে যদি আবার সেখানে প্রয়োজন হয়, নিশ্চয়ই যাব।’’
আর যায় কোথায়! টুইটার-সোশ্যাল মিডিয়ায় মথুরার সাংসদকে নিয়ে চরম বিদ্রুপ-কটাক্ষ শুরু হয়ে যায়। কেউ বললেন, উনি যে সংস্থার বিজ্ঞাপন করেন, তাদের কারখানায় আগুল লাগলে নিশ্চয়ই ছুটে যেতেন। অনেকেই মন্তব্য করেন, তারকাদের রুপোলি পর্দায় দেখে ভোট দিলে এমনটাই হয়। একজন নিজেকে বিজেপি সমর্থক বলে পরিচয় দিয়ে মন্তব্য করেন, এই সব সেলেব্রিটিকে টিকিট দেওয়ার বদলে স্থানীয় নেতাদের টিকিট দেওয়া উচিত।
বেগতিক দেখে সিনেমার শ্যুটিংয়ের ছবি টুইটার থেকে সরিয়ে দেন হেমা। কিন্তু তাতেও প্রশ্নবাণ থেমে থাকেনি। প্রশ্ন উঠতে থাকে, নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে না গিয়ে তিনি কী ভাবে শ্যুটিং করছেন? চাপের মধ্যে মুখ রক্ষায় হেমা টুইটারে যুক্তি দেন,
‘আমার উপস্থিতির থেকেও বেশি জরুরি মথুরায় আইন-শৃঙ্খলার উপস্থিতি’। তাতে আক্রমণের সুর আরও চড়তে থাকে। এক জন মন্তব্য করেন, ‘‘হেমা মালিনীর সাংসদ বা নেতা হওয়ার কোনও যোগ্যতাই নেই। তাঁর কোনও সামাজিক বোধবুদ্ধিও নেই।’’ প্রশ্ন ওঠে তাঁর সংবেদনশীলতা নিয়েও। তখন দলের শীর্ষ নেতারা হেমাকে যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর নির্দেশ দেন। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র পরিস্থিতি সামলাতে বলেন, ‘‘হেমাজি ঘটনাটি জানার পরেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। উনি খুব শীঘ্রই মথুরা পৌঁছচ্ছেন।’’ দলের নির্দেশ পেয়ে মুম্বই থেকে দিল্লির বিমান ধরেন হেমা। নিজের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি যথেষ্ট সংবেদনশীল। কিন্তু আমি একজন শিল্পী। আমার দায়বদ্ধতা আছে, শ্যুটিংয়ের তারিখ দেওয়া রয়েছে।’’
হেমাকে নিয়ে বিজেপির বিপত্তি নতুন নয়। সাংসদ হওয়ার পর থেকে যত বারই হেমা আলোচনায় এসেছেন, প্রত্যেক বারই ভুল কারণে, বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে। প্রতি বারই টুইটার-সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ হয়েছে। শিক্ষা নেননি হেমা। কিছু দিন আগে জয়পুরে তাঁর গাড়ির সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির দুর্ঘটনায় একটি দু’বছরের বালিকার মৃত্যু হয়। নিজের চালকের দোষ থাকলেও টুইটারে বিজেপি সাংসদ দাবি করেন, মৃত বালিকার বাবাই ট্রাফিক আইন ভেঙেছিলেন। তার পর তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বৃন্দাবনে পশ্চিমবঙ্গ-বিহারের বিধবারা কেন ভিড় করছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হেমা। সম্প্রতি অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মহত্যাকে ‘বোধবুদ্ধিহীন’ আখ্যা দেন তিনি। মন্তব্য করেন, এই সব বোধবুদ্ধিহীন আত্মহত্যায় কোনও লক্ষ্যপূরণ হয় না।
পরে অবশ্য আত্মরক্ষায় আজ অখিলেশ যাদবের সরকারকে আক্রমণ করেছেন হেমা মালিনী। মথুরার ঘটনা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, গত দু’বছর ধরে ওখানে জবরদখল রয়েছে। অখিলেশ-সরকার কী করছিল? কিন্তু আক্রমণ করতে গিয়েও ‘সেমসাইড গোল’ দিয়ে বসেছেন হেমা। জানিয়েছেন, দু’বছর আগে সাংসদ হলেও বিষয়টি তিনি জেনেছেন মাত্র দু’মাস আগে।