ছবি: সংগৃহীত।
গত এক সপ্তাহ ধরে ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণের কবলে পড়ে কালো ধোঁয়াশার আবরণে ঢেকে রয়েছে দিল্লি। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই পরিস্থিতিকে ‘পাবলিক এমার্জেন্সি’-র আখ্যা দেওয়ার অনুরোধ করে আবেদন জানানো হয়েছে। দিল্লি সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মান্য করেনি, এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদনও জমা দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এ বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রবেশকারী যে কোনও গাড়ির উপর ১০০ শতাংশ গ্রিন সেস ধার্য করা হয়েছে। পরিবেশবিদ সুনীতা নারায়ণের কথা অনুযায়ী, দূষণ নিয়ন্ত্রণে সুপ্রিম কোর্টের রায় দৃঢ় ভাবে মান্য করা হয়নি বলেই আজ রাজধানী এই চরম বিপর্যয়ের মুখে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু) কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কেই দীর্ঘস্থায়ী সুদৃঢ় পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী অনিল দাভে বলেছেন, দূষণ রুখতে সব রাজ্যকেই সমান দায়িত্ব নিতে হবে। সব সময় এ বিষয়ে রাজ্যগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল (এনজিটি) দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বায়ুদূষণ সর্বোচ্চ হওয়ার আগে কেন দিল্লি সরকার কোনও ভূমিকা গ্রহণ করেনি? রাস্তায় জল ছেটানোর সিদ্ধান্ত নিতে দিল্লি সরকার কেন এত দেরি করল— সেই বিষয়েও এনজিটি প্রশ্ন তুলেছে।
এই বায়ুদূষণ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী-সহ আপ দলের প্রত্যেক সদস্যই পঞ্জাব ও হরিয়ানায় ফসল জ্বালানোর ঘটনাকেই দায়ী করছেন। ফসল জ্বালানোর মতো দূষণ উৎপাদনকারী ঘটনার প্রতি কেন্দ্রের উদাসীনতাকেও দায়ী করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী অনিল দাভে বলেন, “দিল্লির দূষণের জন্য ৮০ শতাংশ দায়ী রাজধানীর ভুল আবর্জনা পরিষ্কার পদ্ধতি ও শুকনো পাতা জ্বালান। বাকি ২০ শতাংশ দায়ী অন্য রাজ্যের ফসল পোড়ান।” দাভে এই পরিস্থিতিতে দিল্লি সরকারকে এই ধরনের দোষারোপের খেলা বন্ধ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ করতে বলেছেন।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল কেন্দ্র ও রাজ্যকে একজোটে এই বিপর্যয় মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির সমস্ত স্কুলে তিন দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিবাসীকে আগামী কয়েক দিনের জন্য কাজকর্ম স্থগিত রেখে বাড়ির বাইরে না বেরতে অনুরোধ করেছেন। সমস্ত রকম নির্মাণকাজ আগামী পাঁচ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এমনকী, মেট্রো রেলের নির্মাণকাজও বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী দশ দিনের জন্য সমস্ত রকম ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বদরপুর থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাস্তায় জল ছেটান ছাড়াও রাস্তার ধারের বড় গাছগুলিতে জল দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে।
উপরাজ্যপাল নাজিব জং আজ দিল্লিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। বৈঠকে তিনি দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপেরও প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন, কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঘটিয়ে দ্রুত দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়াও ১০ নভেম্বর থেকে প্রতিটি রাস্তায় ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং করানোর কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা গত এক সপ্তাহব্যাপী এই কালো ধোঁয়াশাচ্ছন্ন দিল্লির সঙ্গে ১৯৫২ সালে লন্ডনের ‘গ্রেট স্মগ’-এর তুলনা করেছেন। এই গ্রেট স্মগের কবলে পড়ে ওই সময়ে লন্ডনে প্রায় চার হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছিল। প্রায় প্রতি বারই শীতকালে দিল্লির বায়ুমণ্ডলে সংযুক্তিকরণ বেড়ে গিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। এই বছর বাতাসে পার্টিকিউলেটেড ম্যাটার (পিএম) বেড়ে দাঁড়ায় ২.৫ পিএম থেকে ২.১০ পিএম। আজ সকাল পর্যন্ত লোধী রোডে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৫০০। তবে দিল্লিবাসীর জন্য আশার খবর ও কেজরীবাল সরকারের জন্য স্বস্তির বিষয় হল, আজ ভোরের দিকে বায়ুপ্রবাহের গতিবৃদ্ধি। এর ফলে বাতাসে পিএম-এর মাত্রা কমবে বলে আশা করছেন পরিবেশবিদ ও আবহবিদেরা।
আরও পড়ুন
দিল্লি কী ভাবে ‘গ্যাস চেম্বার’ হয়ে উঠল? শুনানি সুপ্রিম কোর্টে
‘গ্যাস চেম্বার’ দিল্লির দূষণে ৫২-র লন্ডনের ছায়া, দেখতে হবে মৃত্যুমিছিল?