প্রতীকী ছবি।
মহিলাদের উপরে নিগ্রহ এবং পণ সংক্রান্ত অত্যাচারের ঘটনা বেড়ে চলায় পরিস্থিতি যথেষ্টই ঘোরালো কেরলে। হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে, রাজ্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করছে। তারই মধ্যে বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন দক্ষিণী ওই রাজ্যের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান।
পণ দেওয়া ও নেওয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে অনশন কর্মসূচি নিয়েছিল একটি গাঁধীবাদী সংগঠন। তাদের ওই আহ্বানকে সমর্থন জানিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বকে ফোন করেছিলেন রাজ্যপাল। তার পরে রাজভবনে নিজেই বসেছিলেন এক দিনের অনশনে। কিন্তু বিতর্ক সেখানে নয়। এর পরে কেরলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ডেকে আচার্য হিসেবে বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল। সেই বৈঠকে উপাচার্যদের কাছে আরিফের প্রস্তাব, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং ডিগ্রির শংসাপত্র দেওয়ার সময়ে পড়ুয়াদের কাছ থেকে এই মর্মে মুচলেকা (বন্ড) নেওয়া হোক যে, তাঁরা কোনও ভাবেই পণ দেওয়া-নেওয়ায় জড়াবেন না। পরে যদি তাঁদের কারও বিরুদ্ধে পণ সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে, তা হলে তাঁদের ডিগ্রি বাতিল করা হোক। আইনত এমন পদক্ষেপ আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞেরা এবং বেধেছে বিতর্ক।
রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরকে এড়িয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কেন উপাচার্যদের ডেকে কথা বলবেন, এই প্রশ্নে সরকার পক্ষের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বেধেছিল বাংলায়। কেরলের সিপিএম-শাসিত সরকারের শিক্ষা দফতর অবশ্য রাজ্যপাল আরিফের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি, বৈঠক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেনি। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আর বিন্দুর প্রশ্ন, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ডিগ্রি দেওয়ার সময়ে পড়ুয়াদের কাছ থেকে বন্ড যদি লিখিয়ে নেওয়াও হয়, তাঁদের পরিবারের উপরে তা প্রযোজ্য হবে কী ভাবে? আর ডিগ্রি বাতিলই বা কী ভাবে সম্ভব?
রাজ্যপাল আরিফ বলেছেন, ‘‘সাক্ষরতার হার এবং জীবনের গড় আয়ুর মতো সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে যে রাজ্য উল্লেখযোগ্য উন্নতি করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, সেখানে পণের কারণে বেদনাদায়ক মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এই নোংরা প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’’ কিন্তু তাঁর উত্থাপিত প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, জালিয়াতি বা পরীক্ষায় বড় রকম অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ডিগ্রি কেড়ে নেওয়া হয়। খুনের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে কেউ শাস্তি পেলেও ডিগ্রি বাতিল হয়ে যায় না। কারও শিক্ষাগত যোগ্যতাকে এ ভাবে খারিজ করা যায় না। তা হলে পণের ক্ষেত্রে ডিগ্রি বাতিলের সংস্থান আইনে ঢোকানো হবে কী ভাবে, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অবশ্য রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আপাতত ‘পিঙ্ক প্রোটেকশন প্রজেক্ট’ চালু করায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। পণ বা মহিলাদের উপরে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ঘটলে থানায় অভিযোগ দায়েরের জন্য এর পরে আর অপেক্ষা করতে হবে না। ওই প্রকল্পে প্রশিক্ষিত মহিলা পুলিশকর্মীরা পঞ্চায়েত বা পুরসভার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাড়িতে যাবেন। এলাকায় এলাকায় নজরদারির জন্য থাকবে ‘পিঙ্ক পেট্রল’। রাজ্যের ১৪টি জেলাতেই নিযুক্ত হবেন এক জন করে পণ প্রতিরোধ আধিকারিক।