প্রাতরাশ ঠান্ডা কেন, তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের শুরু। — প্রতীকী ছবি।
প্রাতরাশে কেন ঠান্ডা রুটি দেওয়া হয়েছে? এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদে ধুন্ধুমার। মারামারিতে নিহত স্ত্রী। গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হাসপাতালে। পুড়ে ছাই দম্পতির বাড়ি। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাতের আমদাবাদের গোদরেজ গার্ডেন সিটিতে।
৩৮ বছরের অনিল বাঘেল। কাজ করেন কোরিয়ার একটি বহুজাতিক সংস্থায় এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র হিসাবে। স্ত্রী ৩৭ বছরের অনিতা দু’মাস আগে পর্যন্তও একটি টাইল সংস্থায় ডিজাইনার হিসাবে কাজ করতেন। দম্পতি থাকেন আমদাবাদের চন্দাখেদা এলাকার একটি আবাসনে। দম্পতির দুই সন্তান। গোলমালের সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। অনিতা প্রাতরাশ বানিয়ে স্বামী অনিলকে খেতে ডাকেন। অনিল এসে দেখেন রুটি ঠান্ডা। তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বচসা শুরু হয়। তা থেকে হাতাহাতি। এবং শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর মৃত্যু, স্বামীর আহত হওয়া এবং সর্বোপরি বাড়িতে আগুন!
পুলিশ জানিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার রুজু করে তারা তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অনিতাকে খুন করা হয়েছে কি না। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার ৮টা ৪০ নাগাদ দু’জনের মধ্যে চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যায়। তার পরেই হাতাহাতি এবং রক্তারক্তি কাণ্ড। প্রত্যক্ষদর্শী এক আবাসিক জানিয়েছেন, তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় অনিলকে ছুটে আসতে দেখেন। তাঁর বুক, হাত এবং পেট থেকে রক্ত ঝরছিল। ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘অনিল আমাদের এসে বলেন, অনিতা তাঁর উপর হামলা করেছেন তার পর নিজের পেটে চাকু বসিয়ে দিয়েছেন। তার পর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।’’
এ কথা শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে যান অনিলের ফ্ল্যাটের দিকে। দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্য নিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকা হয় এবং অনিতাকে উদ্ধার করা হয়। তত ক্ষণে গোটা ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ ও দমকল। এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফ্ল্যাটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
আমদাবাদ পুলিশের এসিপি ডিভি রানা বলেন, ‘‘পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় অনিতার। তাঁর ঠোঁটে, হাতে, বুকে এবং পেটে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল। আমরা এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছি, সকালে ঠান্ডা রুটি দেওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। আচমকাই অনিতা রান্নাঘর থেকে একটি সব্জি কাটার ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন অনিলের উপর। আহত হলেও অনিল কোনও ক্রমে বাঁচতে পারেন। সেই সময় অনিতা নিজের পেটেই ছুরি বসিয়ে দেন।’’ ডিভি রানা আরও বলেন, ‘‘অনিল দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ খুলে ফেলেন এবং খোলা পাইপের সামনে আগুন ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়, দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাড়িতে। অনিল স্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি। তার পরেই অনিল বাইরে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্য চান।’’
তবে অনিল যা বলছেন, তার মধ্যে কতটা সত্যি তা নিয়ে সংশয়ে পুলিশ। এই প্রেক্ষিতে অনিতাকে ছক কষে খুন করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে চান পুলিশকর্তারা।