—প্রতীকী ছবি।
ডোকলাম সঙ্কটে ভারতকে আরও চাপে ফেলতে নতুন কৌশল চিনের। সামরিক পদক্ষেপের হুমকি তো রয়েইছে, এ বার কূটনৈতিক ভাবেও ভারতকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা শুরু করে দিল বেজিং। ডোকলাম নিয়ে বেজিঙের অবস্থান কী, নেপালকে তা বিশদে জানাল চিন। নয়াদিল্লিতে তো বটেই, কাঠমান্ডু এবং বেজিঙেও নেপালি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা হল চিনা দূতদের।
ডোকলামকে কেন্দ্র করে ভারত ও চিনের মধ্যে যে টানাপড়েন, আমেরিকা এবং অধিকাংশ পশ্চিম দেশ ভারতের পাশে। জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় শক্তিও ভারতের পক্ষেই। চিন তাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিজের পক্ষে টেনে আঞ্চলিক সমীকরণে ভারতকে টেক্কা দিতে চাইছে। সেই লক্ষ্যেই নেপালকে কাছে টানার চেষ্টা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
নয়াদিল্লির চিনা দূতাবাসের উপ-প্রধান একটি ‘সৌজন্য বৈঠকে’ নয়াদিল্লির নেপালি দূতাবাসের উপ-প্রধানের সঙ্গে ডোকলাম নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে টিওআই সূত্রের খবর। ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তের ডোকলামকে কেন্দ্র করে বেজিং এবং নয়াদিল্লির মধ্যে দু’মাসের বেশি সময় ধরে টানাপড়েন চলছে। এ বিষয়ে চিনের অবস্থান ঠিক কী, নেপালি কূটনীতিককে সে কথা চিনের তরফে বিশদে জানানো হয়েছে।
যে ডোকলামকে কেন্দ্র করে গোলমাল চলছে, সেই ডোকলাম ভারতের এলাকা নয়, ভুটানের এলাকা। ভুটানের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেখানে ভারত বাহিনী পাঠিয়েছে। তা ছাড়া, ত্রিদেশীয় সীমান্তে চিন যে ভাবে আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তাতে ভারতের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছেন। ডোকলামে বাহিনী পাঠানোর অন্যতম কারণ সেটিও। কিন্তু চিন দাবি করছে, ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে চিনের এলাকায় ঢুকেছে। ভারত বাহিনী প্রত্যাহার না করলে কোনও আলোচনা শুরু হবে না, বরং সামরিক পদক্ষেপ করা হতে পারে— বেজিং এমনই জানিয়েছে। নেপালের সঙ্গে আলোচনাতেও চিন এই অবস্থানই বিশদে তুলে ধরেছে বলে জানা গিয়েছে।
নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ভারতপন্থী হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু নেপালের অন্য বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দল ভারত-বিরোধী ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। —ফাইল চিত্র।
ভুটানের সঙ্গে আগেই কূটনৈতিক দৌত্য শুরু করেছে চিন। ডোকলাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করার জন্য ভুটানও যাতে ভারতকে চাপ দেয়, সে বিষয়ে থিম্পুকে রাজি করানোর চেষ্টা শুরু করেছে বেজিং। এই দৌত্য শুরুর পর থেকে চিনের প্রতি ভুটানের অবস্থান ক্রমশ নরম হতে শুরু করেছে। এ বার কাঠমান্ডুকেও নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা শুরু করেছে বেজিং।
আরও পড়ুন: উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্রপুঞ্জের, সায় চিনেরও
সীমান্ত সমস্যা নিয়ে নেপালের সঙ্গে চিনের আলোচনাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ভুটানের সঙ্গে যেমন ভারত এবং চিনের সীমান্ত মিলেছে, তেমনই নেপালের সঙ্গেও ভারত ও চিনের সীমান্ত অন্তত দু’টি জায়গায় মিলেছে। এর মধ্যে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পশ্চিমাংশের সীমানা যেখানে মিলছে, সেই লিপুলেখ এলাকাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লিপুলেখকে দু’দেশই নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। কিন্তু ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন চিন সফরে গিয়েছিলেন, তখন লিপুলেখ পাস দিয়ে ভারত-চিন বাণিজ্য তথা পণ্য পরিবহণ সংক্রান্ত চুক্তি করে এসেছিলেন। ভারত এবং চিনের মধ্যে এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছিল নেপাল। লিপুলেখ নেপালের নাকি ভারতের, তার ফয়সলা হওয়ার আগেই ওই এলাকাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভারত এবং চিন কী ভাবে চুক্তি করে ফেলল, প্রশ্ন তুলেছিল নেপাল। এ বার সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেই নেপালের সঙ্গেই চিন আলোচনা শুরু করায় নয়াদিল্লির অস্বস্তি বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ডোকলামে ‘ছোটখাটো’ সেনা অভিযানের পথে চিন?
নেপালের একটি অংশের মধ্যে এমনিতেই ভারত-বিরোধী মনোভাব এখন বেশ শক্তিশালী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সমর্থকরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, ডোকলামে ভারতই আগ্রাসন দেখাচ্ছে, চিন নয়। রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকে নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও নানা টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চিন-নেপাল বৈঠক তাই অস্বস্তিতেই রাখছে দিল্লিকে।