কাঁকিনাড়ার স্বাস্থ্যশিবিরে কাফিল খান। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
অনেকের চোখেই মূর্তিমান প্রতিবাদের প্রতীক! তবে এখনও স্বধর্মেই সব থেকে স্বচ্ছন্দ। বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় চিকিৎসক দিবসে’ সেই প্রতিবাদী ডাক্তারবাবু কাফিল খানকে একজন মগ্ন চিকিৎসকের ভূমিকাতেই দেখল বাংলা।
কাঁকিনাড়ায় দিনভর কার্যত উপোস করে স্বাস্থ্যশিবিরে নাগাড়ে ৪৫৮ জন রোগী দেখার পর মুখ তুলে কাফিল আনন্দবাজারকে বললেন, “চিকিৎসাব্রতে লেগে থাকব! এবং আগামী দিনে এ দেশের চলতি রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থাটাকে পাল্টাতে তার ভেতরে ঢুকতেও আমি কসুর করব না। সরাসরি কবে রাজনীতি করব, তা জানি না! তবে পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত!”
২০১৭-য় গোরক্ষপুরের বাবা রাঘব দাস মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেন-সঙ্কটে ৫৩ জন শিশুমৃত্যুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েই যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ‘বিষনজরে’ কাফিল খান। কখনও কর্তব্যে গাফিলতির মিথ্যে অভিযোগ, কখনও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে নেমে দেশের সুরক্ষা নষ্ট করার দায় তাঁর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। কিন্তু ইলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে ‘নিষ্কলুষ’ তকমা আদায় করে বার বার স্বমহিমায় ফেরেন কাফিল। সুপ্রিম কোর্টেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ধোপে টেকেনি। তবু উত্তরপ্রদেশে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে এখনও তাঁর সাসপেনশন বহাল।
কাফিল বললেন, “যোগী সরকার আমার চাকরির বিষয়ে হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনছে না। তদন্ত রিপোর্ট চেপে যাচ্ছে। এ মাসেই ফের ইলাহাবাদ হাই কোর্টে যাব আমি।” কিন্তু এই সন্ধিক্ষণেও ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভোটে তাঁর অবস্থান নিয়ে রাখঢাক নেই। কাফিল বলছেন, “বাংলার ঢঙে উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ গড়া জরুরি। প্রস্তুতি চলছে। যোগী বাবাকে গোরক্ষপুরে ফেরত পাঠাতে মরিয়া চেষ্টা করব।” তবে কোনও দলে না-ঢুকে কয়েক জন প্রার্থীর পাশে দাঁড়াতে চান তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র হার তাঁর চোখে ঐতিহাসিক। এত বড় ঘটনার পরে তাঁর ভ্রাম্যমান ডাক্তারখানা ‘ডক্টর্স অন উইল’কে সঙ্গে করে এ বারই বাংলায় পা রেখেছেন কাফিল। বাংলায় 'কাফিল খান ফাউন্ডেশনে'র সহযোগী একটি নাগরিক মঞ্চের প্রতিনিধি নওশিন বাবা খানের কথায়, “কী ঝামেলা! ডাক্তারবাবু সারা দিনে কিছু দাঁতেই কাটলেন না! বিকেল চারটের বদলে সাতটা অবধি রোগী দেখেছেন।” বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিনে এক বন্ধুর সহযোগিতায় ধুতি-পাঞ্জাবিতে সেজেছিলেন কাফিল।
আজ, শুক্রবার ও কাল, শনিবার কলকাতায় কাফিলের স্বাস্থ্য-শিবির। তাঁর আক্ষেপ, স্বাধীন দেশে কোনও সরকারই স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় সম্পদের এক শতাংশ খরচ করেনি।