এনআরসি-র বিরোধিতায় আলোচনায় কলকাতায় পদত্যাগী আইএএস কান্নন গোপীনাথন। শুক্রবার ভূপেশ ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করা যাবে না বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিটেনশন সেন্টার গড়তে এলে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এ বার এনআরসি-র জন্য কোনও নথিপত্র সংগ্রহ বা জমা দেওয়ার কাজ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের কাছে আহ্বান জানালেন পদত্যাগী আইএএস কান্নন গোপীনাথন। তাঁর মতে, এনআরসি-র মতো ‘উদ্ভট পরিকল্পনা’ ব্যর্থ করতে এর চেয়ে উপযুক্ত পথ আর কিছু নেই!
জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ সামনে রেখে আইএএস-এর চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন এই তরুণ মালয়ালি। দমন ও দিউতে কর্মরত অবস্থায় তাঁর পদত্যাগের কারণ শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। গোপীনাথনের কথায়, ‘‘সরকার চাইলে ৩৭০ ধারা তুলে নিতে বা অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করেছিলাম, বাকি দেশের নীরবতার প্রতিবাদে! গোটা কাশ্মীর উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হল, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আটকে রাখা হল, এক জন আইএএস-কে কোনও কারণ না দেখিয়েই গ্রেফতার করা হল। অথচ কেউ কিছু বলল না!’’ সদ্যপ্রাক্তন আমলার উপলব্ধি, ‘‘প্রশ্ন তোলার অভ্যাস আমরা হারিয়ে ফেলছি। এনআরসি করে প্রশ্ন তোলা একেবারেই বন্ধ করতে চাওয়া হচ্ছে। আপনি প্রশ্ন করেন আপনি নাগরিক বলে। নাগরিকত্ব না থাকলে প্রশ্ন করার আর সুযোগ কোথায়?’’
আরও পড়ুন: মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার দফতরে সিবিআই হানা
চাকরি ছাড়ার পরে প্রথম কিছু দিন কাশ্মীর নিয়েই কথা বলতেন গোপীনাথন। এখন নানা শহরে ঘুরে ঘুরে এনআরসি-কে দু’টো শব্দে ব্যাখ্যা করছেন তিনি— প্রথমত, ওই নাগরিকপঞ্জি গরিব-বিরোধী এবং দ্বিতীয়ত, মুসলিম-বিরোধী। তাঁর যুক্তি, ৫০ বছরের পুরনো নথিপত্র না দেখাতে পারলে নাগরিকত্বই থাকবে না, এমন উদ্ভট যুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। আর সরকারি কাজের অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, পুরনো কাগজপত্র রাখার ক্ষেত্রে সামান্য সম্পন্ন মানুষের যতটুকু আয়োজন থাকে, গরিব মানুষের তা-ও থাকে না। যে কোনও বিপর্যয়ে কাগজপত্র নিয়ে সব চেয়ে বিপদে পড়েন গরিব মানুষই। এনআরসি-র নামে গরিব মানুষকে রাষ্ট্রহীন করে দেওয়ার অভিসন্ধি হচ্ছে বলে তাঁর মত।
সিপিআইয়ের রাজ্য দফতর ভূপেশ ভবনে শুক্রবার ‘অল ইন্ডিয়া পিপল্স ফোরাম’-এর উদ্যোগে ‘এনআরসি: বিপর্যয় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা-সভায় গোপীনাথনের আরও বক্তব্য, হিন্দু বা অ-মুসলিম হলে কোনও না কোনও ভাবে নাগরিকত্বের ব্যবস্থা হয়ে যাবে, এই আশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলছেন, মুসলিমদের ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’র তকমা নিয়ে দেশ ছাড়তে হবে। অথচ অসমের অভিজ্ঞতা এই ঘোষণার সঙ্গে মিলছে না।
গোপীনাথনের মন্তব্য, ‘‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ৫৪৩টা লোকসভা আসন কেউ পেলেও কিছু ব্যাপার সমর্থন করা যায় না। আপনারা ইঁদুরের মতো ছুটোছুটি করে ২২ রকম কাগজ জোগাড় করলে সরকার ২৩ নম্বর কাগজের কথা বলে আপনাদের বিপাকে ফেলতে পারে। তার চেয়ে কাগজ জোগাড় বা জমা দেওয়া বন্ধ রাখুন। দেখা যাক, কী ভাবে এনআরসি হয়!’’