ভিডিও-র সেই অংশ।
বয়স তার বড়জোর বছর চারেক। কচি হাতদু’টো জোড় করে মিনতি করছে, ‘‘আপ পেয়ারসে পড়াইয়ে।’’ বোকো না আমায়, একটু ভালবেসে পড়াও! গলা বুজে আসছে। দু’চোখ ফেটে জল।
ছোট্ট আঙুলে পেনসিল। খাটে জলচৌকি। জলচৌকির ওপরে খোপ খোপ অঙ্ক খাতা। তাতে সার দিয়ে লেখা ১, ২, ৩, ৪, ৫...। এক মহিলার তেতো গলা শোনা যাচ্ছে— ‘‘ওয়ান কঁহা হ্যায়? টু কঁহা হ্যায়?’’ সে আঙুল বুলিয়ে দেখিয়ে চলেছে। থামতেই গর্জন, ‘‘থ্রি কঁহা হ্যায়? ওয়ান কঁহা হ্যায়?’’ বাচ্চা মেয়েটা দু’হাতে খামচে ধরছে নিজের মাথা। যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। বলছে, ‘‘এই তো দেখালাম ওয়ান!’’
আরও পড়ুন: যোগীকে দুষে মৃত শিশুদের বাড়িতে রাহুল
মোবাইলে তোলা একটা ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে বাস্তবের এই তোতা কাহিনি। ইনস্টাগ্রামে শনিবার ভিডিওটা শেয়ার করেছেন বিরাট কোহালি এবং শিখর ধবন। ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট ওই ভিডিওর নীচে লিখেছেন, ‘‘মায়া-দয়া বলে কিছু নেই। বাচ্চাটার রাগ-যন্ত্রণা, কিছুরই তোয়াক্কা না করে এক জন নিজের ইগোর বশে তাকে শিখতে বাধ্য করছে। জোর করলে বাচ্চা কিছুই শেখে না।’’ শিখর লিখেছেন, ‘‘এত অসহ্য ভিডিও আগে দেখিনি। বাবা-মা হওয়াটা বিরাট দায়িত্ব। বাচ্চারা যা হতে চায়, সে ভাবেই তাদের গড়ে তুলব আমরা।’’
বিরাট কোহালির সেই ইনস্টাগ্রাম পোস্ট
কে পড়াচ্ছিলেন তাকে? গৃহশিক্ষিকা না, মা? জানা যায়নি। তবে ক্ষুব্ধ-উদ্বিগ্ন অনেকেই। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘মারধর করে কোনও লাভ হয় না। ভয় পেলে শিশু কিছুই শিখতে পারবে না।’’ হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্তও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এটাই বাচ্চাদের আনন্দ করে শেখার বয়স। মনোবিদ প্রদীপ সাহা বললেন, ‘‘সবচেয়ে জরুরি হল, বাবা-মায়ের সন্তানকে মানুষ করার কৌশল। সেটা সঠিক পদ্ধতিতে না হলে ৬০ শতাংশ শিশু মানসিক রোগীতে পরিণত হয়।’’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘‘শিক্ষা যদি নাও হয়, খাঁচা তো হইল।’’ ‘পাখির’ কপালে কী আছে, তা কে জানে!