—ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে আম আদমি পার্টি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল। তেলঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতি। কর্নাটকে কংগ্রেস। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে। একের পর এক বিরোধী শাসিত রাজ্যে বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের হানা বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র নেতানেত্রীদের চিন্তায় ফেলছে। এ বিষয়ে রাজ্য স্তরে মতভেদ ভুলে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও দিল্লিতে আম আদমি পার্টির নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি হানার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে দলে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। আগামী সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আসন বণ্টনের পাশাপাশি সিবিআই-ইডি-র রাজনৈতিক অপব্যবহার নিয়ে আলোচনা হবে।এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার আজ দিল্লিতে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের মতভেদ থাকলেও তিনি তিন পক্ষকে লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেবেন।
বুধবার আম আদমি পার্টির রাজ্যসভা সাংসদ সঞ্জয় সিংহের বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালিয়েছিল। তারপরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার ইডি পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল নেতানেত্রীদের বাড়িতে হানা দেওয়ার পাশাপাশি কর্নাটকের শাসক দল কংগ্রেস নেতা মঞ্জুনাথ গৌড়ার বাড়িতে হানা দিয়েছে। আয়কর দফতর তামিলনাড়ুতে শাসক দল ডিএমকে-র সাংসদ জগৎরক্ষকণ, তেলঙ্গানায় শাসক দল বিআরএস বিধায়ক এম গোপীনাথের বাড়িতে হানা দিয়েছে।
মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকের শুরুতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছিলেন, আগামী দিনে বিরোধী নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হানা বাড়বে। বিরোধী শিবির মনে করছে, ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরকে মাঠে নামিয়ে মোদী সরকার তথা বিজেপি এক ঢিলে তিন পাখি মারতে চাইছে। এক, ইন্ডিয়া-র শরিকদের উপরে প্রবল চাপ তৈরি করা যাতে তাঁরা জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান। অথবা ইন্ডিয়া-য় থেকে বিরোধী জোটে সমস্যা তৈরি করেন। দুই, বিরোধী শিবিরের সবাইকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলেতাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে দেওয়া। বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পুরে তাঁদের দুর্বল করা। তিন, মোদী সরকারের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরানো।
এত দিন কংগ্রেস দিল্লির আবগারি কেলেঙ্কারি নিয়ে আম আদমির পার্টির বিরুদ্ধে সরব ছিল। কিন্তু সঞ্জয় সিংহের গ্রেফতারির পরে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সঞ্জয় রাউত থেকে শুরু করে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লার মতো অন্যান্য বিরোধী দল একে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ আখ্যা দিয়ে আপ-এর পাশে দাঁড়িয়েছে। দিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দর সিংহ লাভলিও বলেছেন, ‘‘দিল্লির আবগারি নীতিতে কেউ দুর্নীতি করে থাকলে তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগানো উচিত নয়।’’ কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল আবার পাল্টা শর্ত দিয়ে বলেছেন ''সঞ্জয় সিংহের গ্রেফতারি বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আমরা পুরোপুরি ওঁর পাশে দাঁড়িয়ে এই রাজনৈতিক স্বার্থে তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগানোর বিরোধিতা করছি। একই কারণে আপ শাসিত পঞ্জাব পুলিশের হাতে কংগ্রেস নেতা ও পি সাইনি ও সুখপাল সিংহের গ্রেফতারিরও বিরোধিতা করছি।"
পশ্চিমবঙ্গে ইডি-সিবিআই হানা নিয়ে অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের পাশে দাঁড়াতে নারাজ। রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। খড়্গে অবশ্য মুম্বইয়ের বৈঠকে মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। আজ পওয়ার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইডি-র হানাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অঙ্গ। বুধবার পওয়ার বলেছিলেন, লোকসভা ভোটে দিল্লিতে আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হবে। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও তিনি কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএমকে মতভেদ ভুলে লোকসভা ভোটে বোঝাপড়া করার পরামর্শ দেবেন বলে জানিয়েছেন পওয়ার।
পওয়ারের বক্তব্য, মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশ— সিবিআই-ইডির ভয় দেখিয়ে বিজেপি অন্য দলের নেতাদের ভাঙিয়ে নিজেদের সরকার গড়েছে। আজ মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিজেপি নেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি-র অভিযান হয় না কেন!’’ উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও শরিক নেতাদের বাড়িতে ইডি হানা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।