অমিত শাহ।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইন আরও কঠোর করা দরকার না তা তুলে দেওয়া প্রয়োজন, সেই বিষয়ে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করল।
মোদী জমানায় কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই বিজেপি নেতারা তাঁকে যেমন ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ বা দেশদ্রোহী তকমা দিয়েছেন, তেমনই জেএনইউ-র ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করায় আইনের অপব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় এলে ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন তুলে দেওয়া হবে।
ভারতীয় দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি দণ্ডবিধির অপরাধ সংক্রান্ত আইনে সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছে। দিল্লির ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রণবীর সিংহের নেতৃত্বে এই কমিটিই সুপারিশ করবে, ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আইপিসি ও ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে কোথায় রদবদল দরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমিটি জানতে চেয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ কি মুছে দেওয়া দরকার, না কি তার সংজ্ঞা, সুযোগ ও পরিধিতে বদল দরকার? জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রতীক, দেশের সংবিধানের প্রতি অপমানকে প্রত্যক্ষ অপরাধের আওতায় নিয়ে আসা দরকার কি না, তা নিয়েও মতামত চাওয়া হয়েছে। ‘মব লিঞ্চিং’ এবং ‘সম্মান রক্ষায়’ খুন বা ‘অনার কিলিং’-কে নিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় নিয়ে এসে শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার কি না, তা নিয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কমিটি মতামত চাইছে। একইসঙ্গে ‘কর্পোরেট হোমিসাইড’ বা কোনও বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে খুনের অপরাধের আইন দরকার কি না, তা-ও কেন্দ্র বুঝতে চাইছে।
আরও পড়ুন: দেশ জুড়ে হেনস্থা করোনা রোগীদের
আইনজ্ঞেরা মনে করছেন, মোদী সরকারের এই আইনি সংস্কারের চেষ্টার মধ্যে অন্তত দু’টি প্রগতিশীল দিকও রয়েছে। এক, নিষ্কৃতি মৃত্যু। দুই, মহিলাদের নিজেদের শরীরের উপরে অধিকার। রোগযন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই মারণ ইঞ্জেকশন নিয়ে নিষ্কৃতি-মৃত্যু বা ‘অ্যাক্টিভ ইউথেনাসিয়া’-র পক্ষে। কিন্তু দেশের আইনে তার অনুমতি নেই। কেন্দ্রের কমিটি এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চাইছে। একইসঙ্গে মহিলাদের নিজের শরীরের উপরে অধিকার বা সন্তান ধারণের অধিকার নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে গর্ভপাতকে আইনি অপরাধের তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার কি না, তা-ও বুঝতে চাইছে কেন্দ্র। কারণ এখন আইনে শুধুমাত্র মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্যই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়।