Nandita Das

এই অশান্ত সময়ে বাংলা অসাধারণ ভাবে পথ দেখাচ্ছে: নন্দিতা দাস

আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘যে দেশে এনআরসি-র চোখরাঙানি হয়, সে দেশে শাহিনবাগও দেখা যায়। এটাই আমাদের পাওয়া।’’

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

জয়পুর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:২৬
Share:

‘‘আজ মান্টো থাকলে বলতেন, সত্তর বছরেও কিছুই শিখলে না!’’

এ দেশ বহুত্বের। এখানে কখনওই একমাত্রিক কিছু হতে পারে না। এ কথা নতুন নয়। তবে বারবার বলতে হয়, এটাই যা চিন্তার এবং দুঃখের। কোনও এক ধারার ভাবনা দিয়ে এ দেশকে বর্ণনা করা যায় না কি? অনেক ধর্মের স্বর থাকবে, সকলের জায়গা থাকবে, এমনই তো কথা ছিল। বৃহস্পতিবার ১৩তম জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভালের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বললেন চলচ্চিত্র পরিচালক-অভিনেতা নন্দিতা দাস। তাঁর মন্তব্য:‘‘আজ মান্টো থাকলে বলতেন, সত্তর বছরেও কিছুই শিখলে না!’’

Advertisement

এনআরসি-ভাবনা ঘিরে ভারতের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে চর্চা চলছে গোটা দুনিয়ায়। এ দেশ কতটা গণতন্ত্রিক, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে বারবার। এমন সময়ে এ সব ‘লজ্জারকথা’ বলতে আপত্তি নেই নন্দিতার। কারণ, আপাতত তিনি গর্বিত জনগণকে নিয়ে। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘যে দেশে এনআরসি-র চোখরাঙানি হয়, সে দেশে শাহিনবাগও দেখা যায়। এটাই আমাদের পাওয়া।’’

নিজের কাজের জগতের অনেকেই যে নেই তাঁর মতো ভাবনার মানুষের পাশে? বলিউডের অনেকেই যে উল্টো কথা বলছেন, খারাপ লাগছে না তাঁর? মন খারাপ যে তাঁর হয়নি আগে তা নয়। বিভাজন তো চোখে পড়েছে আগে। তবে এখন সে সব খারাপ লাগা মনে রাখতে চান না তিনি। কেন?‘‘কারণ, একসঙ্গে এত অভিনেতাকে বহু দিন কথা বলতে শুনিনি। এমন উত্তাল সময়ে কে এল না পাশে তা না দেখে, কে কে এল,সেটাই তো দেখার,’’মনে করান ‘মান্টো’র পরিচালক।

Advertisement

সমস্যার সময়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করায় বিশ্বাসী নন নন্দিতা (ছবি: সুচন্দ্রা ঘটক)

বাঙালি সাংবাদিক দেখে আরও একটু মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করল কি নন্দিতার? স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বলেন, ‘‘এলাকাভিত্তিক বিভাজন একেবারেই মানি না, তবে বাংলা অসাধারণ ভাবে পথ দেখাচ্ছে এ সময়ে। ইতিহাসে বহু সময়েই বাঙালিদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে দেখা গিয়েছে। আবার দেখে খুব ভাল লাগছে।’’ কোনও সমস্যার সময় এখনও যে বাঙালি শিল্পী পরিচালকদের কথা মনে পড়ে তাঁর। এমন সময় তাই আবারবিশেষ করে কলকাতার দিকে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছে তাঁর।

আর নিজে কী ভাবে এ সময়ের পাশে থাকছেন? এর থেকে নতুন ছবির রসদ খুঁজছেন কি তিনি?

সমস্যার সময়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করায় বিশ্বাসী নন নন্দিতা। তবে ভাবতে ভাল ল‌াগে যে,‘মান্টো’ বানিয়েছেন তিনি। তা-ও কিছু দিন আগেই। বলেন, ‘‘যখন ছবির জগতে কাজ করতে শুরু করেছিলাম, তখন তো ‘মান্টো’ বানানোর গুরুত্ব ততটা ছিল না। দেশভাগের ৭০ বছর পরে বানাতে হল। বাধ্য হলাম।’’ তত ক্ষণে কথার পিঠে অনেক কথা হয়ে গিয়েছে। পুবের বর্ডার, পশ্চিমের বর্ডারে অশান্তির চেহারা কী ভাবে আলাদা ছিল দেশভাগের সময়ে, সে সব নিয়ে হয়েছে খানিক আলোচনা। অনেক দিন পর্যন্ত তাই মান্টোর কথা মনে করিয়ে লাভ হত না বলে মনে হয় তাঁর। কিন্তু তার পরে যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে, কে তা জানত! আর এখন তো ‘মান্টো’র মতো আরও ছবি হলে ভাল হয় বলেই মনে হচ্ছে তাঁর।

তবে ‘মান্টো’র মতো ছবি না হলেও, অনেক সাহিত্যিক উঠে আসছেন আবার নতুন করে। তাঁরাই তো মান্টোদের ধারা বজায় রাখেন। কথা বলার সাহস জোগান। নন্দিতা তাঁর মুখ চেয়ে আছেন। তাঁদের পাশে থেকেই কাজ করার স্বপ্ন দেখছেন। নতুন সময়ের অপেক্ষা করছেন। যত বার ধর্মের নামে, জাতের নামে বিভাজন ঘটবে, তত বার আরও অনেক অনেক মান্টোর জন্ম হবে বলে মনে করেন নন্দিতা। মনে করান, তেমনটাই তো এখন হচ্ছে গোটা দেশ জুড়ে।নন্দিতা বলে চলেন,‘‘আমার ভাবতেও উত্তেজনা হচ্ছে যে, শাহিনবাগে এখন একসঙ্গে কত জন মান্টো দাঁড়িয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করছেন! ভাবুন, আপনার কলকাতায় কত জন মান্টো একসঙ্গে কাজ করছেন। ভাবতে ভাল লাগে না?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement