ফাইল চিত্র।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র কাজ কবে শুরু হবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্র। দেশ জুড়ে ওই তালিকা তৈরি হওয়ার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই বুঝে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন, এনআরসি-র আগে বরং পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হোক। যা রূপায়িত হলে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে পালিয়ে আসা মূলত বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব হবে। নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা হবে বিজেপির। আজ এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সিএএ হলেই এনআরসি-র কাজ অর্ধেক হয়ে যাবে।’’
নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসেন ২০১৯ সালে। সে সময়েই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় কুড়ি লক্ষ অসমবাসীর নাম। যাঁদের বড় অংশের ঠিকানা বর্তমানে বিভিন্ন ডিটেনশন কেন্দ্র। প্রায় সেই সময়েই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় মৌলবাদের কারণে যাঁরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, এমন ছয় ধর্মের (হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্সি, জৈন, শিখ ও খ্রিস্টান) মানুষকে ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনে
মোদী সরকার।
ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া আইন বৈষম্যমূলক, এই যুক্তিতে প্রতিবাদে সরব হন বিরোধীরা। শুরু হয় দেশ জুড়ে আন্দোলন। সে সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, প্রথমে সিএএ হবে। তার পর তৈরি হবে দেশবাসীর নাগরিকপঞ্জি। বহিরাগতদের চিহ্নিত করতেই ওই সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কিন্তু গত দু’বছরে করোনার ধাক্কায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের রূপরেখা তৈরি করে উঠতে পারেনি মোদী সরকার। উল্টে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সেই আইন প্রণয়নের জন্য বাড়তি সময় চেয়ে রেখেছে কেন্দ্র।
এই আবহে কবে থেকে দেশে এনআরসি চালু হবে, সেই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই কাল বলেছেন, ‘‘জাতীয় স্তরে এনআরসি করার প্রশ্নে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্র।’’ মন্ত্রীর ওই উত্তরের ব্যাখ্যায় আজ বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছে, ‘‘বহিরাগতদের চিহ্নিত করার প্রশ্নে দেশের প্রতিটি ব্যক্তির তথ্য যাতে এক জায়গায় থাকে, তার জন্য একটি অভিন্ন নাগরিকপঞ্জি বানানোর দাবি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছে দল। যা রূপায়ণ করার আশ্বাসও দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু সরকারের গত কালের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, দেশ জুড়ে এনআরসি-র বিষয়টি এখনও প্রস্তাব আকারে রয়েছে। সরকার এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। দেরি হলেও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে এনআরসি যাতে হয়, তার জন্য সরকারের উপর চাপ
বাড়াবে দল।’’
বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখে তাই এখন এনআরসি-র পরিবর্তে সিএএ কার্যকর করার পক্ষে দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে অসমে এনআরসি হয়েছে। এখন সিএএ যদি কার্যকর করা হয়, তা হলে এনআরসি-র অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে।’’
তবে ইউপিএ সরকারের আমলে যে জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জির (এনপিআর) কাজ চালু হয়েছিল, তা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে কাল লোকসভায় জানান নিত্যানন্দ। লিখিত জবাবে তিনি জানিয়েছেন, ২০২১ সালের জনগণনার প্রথম পর্যায়ের সঙ্গেই এনপিআর-এর যে তালিকা কেন্দ্রের কাছে রয়েছে, তা সংশোধন ও ‘আপডেট’ করার কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে। তার জন্য কারও কোনও কাগজ দেখানোর প্রয়োজন নেই। যদিও করোনার কারণে আপতত বন্ধ রয়েছে জনগণনার কাজও।