ফাইল চিত্র।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে মমতার অভিযোগ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। মমতাকে লেখা এক চিঠিতে পর্রীকর জানান, সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি যা মন্তব্য করেছেন তাতে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। ওই চিঠিতে পর্রীকর লেখেন, “আপনার মতো এক জন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সেনাবাহিনী সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য কোনও ভাবেই কাম্য নয়। আপনার অভিযোগ সেনাদের মনোবলে প্রভাব ফেলতে পারে।”
চিঠিতে তিনি আরও জানান, যদি মমতা নিজে এই কর্মসূচি সম্পর্কে খোঁজ নিতেন, তা হলে তাঁর কাছে এটা অজানা থাকত না যে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করার আগে এক জনের সতর্ক থাকা উচিত সেই প্রসঙ্গে জানিয়ে পর্রীকর বলেন, “রাজনৈতিক দল এবং নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে অনেক সময় ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনার আগে যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত।”
ডানকুনি, পালসিট-সহ রাজ্যের বিভিন্ন টোল প্লাজাগুলিতে অপারেশন মহাসঞ্চালনের কাজ শুরু করেছিল সেনা। সেনার তরফে জানানো হয়, এটা তাদের রুটিন কর্মসূচি। কখনও যুদ্ধের পরিস্থিতি হলে রসদ ও পানীয় জল বিভিন্ন ছাউনিতে পৌঁছনোর জন্য প্রচুর মালবাহী গাড়ির প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জওয়ানরা কত গাড়ি নিতে সক্ষম, দু’দিন ধরে পূর্ব ভারতের সব রাজ্যে সমীক্ষার মাধ্যমে তারই হিসেবনিকেশ চালানো হয়। এমনকী নবান্নের সামনে টোলপ্লাজাতেও সেনা এই কর্মসূচি চালায়। কেন রাজ্যকে না জানিয়ে এ ধরনের কর্মসূচি চালাল সেনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। নবান্নে সারা রাত কাটান। রাজ্যের বিভিন্ন টোল প্লাজা থেকে যত ক্ষণ না সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে তত ক্ষণ তিনি নবান্ন ছেড়ে যাবেন না বলেও জানিয়ে দেন। পাশাপাশি, এই পরিস্থিতিকে সেনা অভ্যুত্থানেক সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। গত ১ ডিসেম্বর সেনার এই কর্মসূচি নিয়ে চলে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মমতা অভিযোগ করেন, সেনা না জানিয়েই এ ধরনের কাজ শুরু করেছে যা মানুষের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক করেছে। এমনকী সেনার বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগও তোলেন মমতা।
আরও খবর...
টোল প্লাজায় সেনা কেন? সারারাত নবান্নে ঘাঁটি গেড়ে রইলেন মমতা
অপারেশন মহাসঞ্চালনের বিষয় নিয়ে যখন সেনার দিকে একের পর এক তোপ দাগছেন, অভিযোগের আঙুল তুলছিলেন মমতা, আসরে নামে সেনাও। সেনাবাহিনীর তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা এই কর্মসূচি শুরু করেছে। কিন্তু এখানেই বিতর্কের অবসান হয়নি। সেনার দাবিকে নস্যাত্ করে মমতা অভিযোগ করেছিলেন তারা মিথ্যা কথা বলছে। শুধু তাই নয়, নোটসঙ্কট নিয়ে প্রতিবাদে নামার জন্যই নরেন্দ্র মোদী তাঁর সরকারকে কোণঠাসা করতে চাইছে।
মমতার এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড় আরও বাড়ে। সেনাবাহিনীর মতো একটা দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ভাবে মমতা এ ধরনের মন্তব্য করলেন তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। নাম না করে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “সেনাবাহিনীর মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে যে কোনও লোকের সতর্ক থাকা দরকার।” রাজ্যপালের এই মন্তব্যে চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। পাল্টা টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের সুরে কথা বলছেন। উনি গত ৮ দিন শহরে ছিলেন না। মন্তব্য করার আগে সব কিছু জেনে নেওয়া উচিত ছিল।’’