ফাইল চিত্র।
একের পর এক মুক্তমনার উপর প্রাণঘাতী হামলা। ২০১৩ থেকে ২০১৭— চার বছরে চার যুক্তিবাদীকে প্রায় একই কায়দায় খুন। শুরু হয়েছিল মহারাষ্ট্রের নরেন্দ্র দাভোলকরকে দিয়ে। তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন কর্নাটকের গৌরী লঙ্কেশ। আর কত জন যুক্তিবাদী বা বিদ্বজ্জনকে কট্টরবাদের শিকার হতে হবে? প্রশ্ন তুলছে গোটা দেশ। এত খুনের কিনারা হয়, কিন্তু যুক্তিবাদীরা খুন হলে কিছুতেই আততায়ীদের খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? বিভিন্ন মহল থেকে এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাতে নিজের বাড়ির দরজায় খুন হয়েছেন গৌরী লঙ্কেশ। যুক্তিবাদী এবং বামপন্থী চিন্তাধারার সাংবাদিক খুন হওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গোটা দেশে। কর্নাটক সরকার আশ্বাস দিয়েছে, এখন থেকে রাজ্যের প্রত্যেক মুক্তমনা এবং প্রগতিশীল চিন্তাবিদকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। গৌরী লঙ্কেশের খুনিদের খুঁজে বার করতে তদন্তকারী দলও গঠিত হয়েছে। কিন্তু আততায়ীরা আদৌ ধরা পড়বে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সব মহলেই। যে ভাবে নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে, এম এম কালবুর্গির খুনিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি গত কয়েক বছরে, সে ভাবেই পার পেয়ে যাবে গৌরী লঙ্কেশের খুনিরাও, বলছে সুশীল সমাজ।
কী হয়েছিল নরেন্দ্র দাভোলকরের সঙ্গে?
মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত যুক্তিবাদী তথা কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের নেতা নরেন্দ্র দাভোলকর প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তারিখটা ছিল ২০ অগস্ট ২০১৩। বাইকে চড়ে দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী হানা দেয়। গুলি করে খুন করে দাভোলকরকে। এই হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছেন। বাকিরা অধরা। বম্বে হাইকোর্ট কিছু দিন আগে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: লঙ্কেশ খুনে বিজেপিকে আক্রমণ রাহুলের, পাল্টা নিন্দায় নিতিন গডকড়ী
গোবিন্দ পানসারে কী ভাবে খুন হলেন?
মহারাষ্ট্রের সিপিআই নেতা তথা লেখক গোবিন্দ পানসারে খুন হন ২০১৫-র ১৬ ফেব্রুয়ারি। কোলাপুরে নিজের বাড়ির সামনেই আক্রান্ত হয়েছিলেন পানসারে এবং তাঁর স্ত্রী। আততায়ীদের গুলিতে জখম হয়েছিলেন দু’জনেই। কয়েক দিন পর হাসপাতালে পানসারের মৃত্যু হয়। বিশেষ তদন্তকারী দল এই ঘটনার তদন্ত করছে। এক জন গ্রেফতার হয়েছিল, সে-ও এখন জামিনে মুক্ত। বম্বে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, নরেন্দ্র দাভোলকরকে যে কারণে খুন হতে হয়েছিল, পানেসরের খুনের কারণও সম্ভবত তেমনই কিছু।
এর পরে কালবুর্গি
কর্নাটকের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা লেখক এম এম কালবুর্গির উপর হামলা হয় ২০১৫ সালেই। ৩০ অগস্ট ধারবাড়ে বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করা হয়েছিল। গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল কালবুর্গির হত্যাকাণ্ডে। কট্টরবাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই যে কালবুর্গিকে খুন হতে হয়েছিল, তা নিয়ে কারও সংশয় ছিল না।
কালবুর্গি খুনের তদন্তও খুব তৎপরতার সঙ্গেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। কারা খুন করল, কিছুই জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: গৌরী লঙ্কেশ হত্যার তীব্র নিন্দা দেশ জুড়ে, রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেন রাজনাথ
চতুর্থ শিকার গৌরী লঙ্কেশ
৫ অগস্ট, ২০১৭। রাতে কর্নাটকে নিজের বাড়ির সামনে খুন হলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ বলছে, আততায়ীর সংখ্যা ছিল তিন। সাতটা গুলি চালানো হয়েছিল। তিনটে ঢুকে যায় গৌরী লঙ্কেশের শরীরে। ঘটনাস্থলেই শেষ হয়ে যান তিনি। প্রগতিশীল এবং বামপন্থী চিন্তার গৌরী লঙ্কেশের লেখায় বার বারই মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখা গিয়েছে। বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বার বার কলম ধরেছেন। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে যে দাভোলকর, পানসারে, কালবুর্গিদের যে কারণে খুন হতে হয়েছে, গৌরীর খুন হয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও সেই কারণই। লঙ্কেশের খুনিরা ধরা পড়বে, এমন আশা অনেকেই আর করছেন না। তবে এর পর কারা পালা, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠছে।