দেবেন্দ্র ফডণবীস। ছবি: পিটিআই।
মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন দেবেন্দ্র ফডণবীসই। বুধবারের বৈঠকে তাঁকেই নেতা বাছল বিজেপির পরিষদীয় দল। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবেও বেছে নেওয়া হয়েছে। ১০ দিন ধরে চলা জল্পনার অবসান ঘটল অবশেষে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন ফডণবীস।
বুধবার মুম্বইয়ে ছিল বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠক। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক— কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ফডণবীসের নাম প্রস্তাব করা হয়। সায় দেন সকলেই। পাশাপাশি পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবেও ফডণবীসকে বাছাই চূড়ান্ত হয় বুধের বৈঠকেই।
ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের আজ়াদ ময়দানে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন ফডণবীস। সূত্রের খবর, বুধবার বিকেলেই ফডণবীসের নেতৃত্বাধীন বিজেপি বিধায়কদের একটি দল রাজভবন যাবে। রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাবেন তারা। ফডণবীসের সঙ্গে দুই শরিক দলের নেতা অজিত পওয়ার এবং একনাথ শিন্ডেও রাজ্যপালের কাছে যাবেন।
বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকের পর ফডণবীস জানান, বিধায়ক দলের নেতা হতে পেরে তিনি সম্মানিত। বিজেপির ১৩২ জন বিধায়কের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদও জানান ফডণবীস।
২৮৮টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের তিন দল— যথাক্রমে ১৩২, ৫৭ এবং ৪১টি আসনে জিতেছে। সূত্রের খবর, ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন শিন্ডে। ফডণবীস এবং তাঁর মধ্যে শুরু হয়ে যায় দড়ি টানাটানি। বিজেপি শিবির তো বটেই, অজিতের এনসিপিও ফডণবীসকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী চাইছিল। সেই আবহেই বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে, এমন ঘোষণা করেন মরাঠাভূমের বিজেপি নেতৃত্ব। এ-ও দাবি করা হয়, ফডণবীসই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। তাঁর সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন দুই সহযোগী দলের দুই প্রতিনিধি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন এনসিপির অজিত। কিন্তু শিন্ডেসেনাদের থেকে কে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে শেষ পর্যন্ত শিন্ডেই উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন, এমনও দাবি করা হয়েছে। বিস্তর দর কষাকষির পরে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড় থেকে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন তিনি। নতুন সরকারে কোন দল কী মন্ত্রিত্ব পাবে, তা নিয়ে এখনও জট না কাটায় শিন্ডেশিবির পাল্টা চাপের রণনীতি নিয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন।
সোমবার দুপুরে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব নির্মলা এবং রূপাণীকে মহারাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের ব্যাপারে রফাসূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিকেলেই অসুস্থতার কথা বলে শিন্ডে ফডণবীস ও অজিতের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে দেন। তার ফলে চলতি অচলাবস্থা আদৌ কেটেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে ঠাণের একটি হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান শিন্ডে। এর পরে মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে যান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান ফডণবীস। দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় দুই নেতার। মনে করা হচ্ছে, সেই বৈঠকে রফাসূত্র মিলেছে।