পথে এ বার: নাসিক থেকে মুম্বইয়ে ঢুকছে কৃষকদের মিছিল। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
সকালে ঠাণে-মুম্বই সীমানা। তার পরে সিয়নের কে জে সোমাইয়া ময়দান। ১৮০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ৩৫ হাজার কৃষকের লাল মিছিল আজ পৌঁছে গেল মুম্বই। মহারাষ্ট্রে সিপিএমের কৃষক সভার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কৃষক-খেতমজুর-আদিবাসীদের আন্দোলনে সামিল হতে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘও সরব হওয়ায় কপালে ভাঁজ বেড়েছে মহারাষ্ট্র ও কেন্দ্রের বিজেপি নেতাদের। আগামিকাল কৃষক নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।
মুম্বইয়ে আজ বিপুল অভ্যর্থনা পেয়েছেন মিছিলে হাঁটা কৃষকেরা। খাবার, জল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ছাত্রেরা। কোথাও কোথাও ফুটব্রিজ থেকে ছোড়া হয়েছে ফুল। রাতে আজাদ ময়দানে যাওয়ার কথা বিক্ষোভকারীদের। আগামিকাল মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভবন ঘেরাও করতে চান আন্দোলনকারীরা। কৃষক সভার সর্বভারতীয় সভাপতি অশোক ধাওলে জানিয়েছেন, মুম্বইবাসীকে অসুবিধেয় ফেলা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধে যাতে না হয়, সে জন্য সকাল এগারোটার পরে তাঁদের সভা শুরু হবে।
কৃষক নেতৃত্বের দাবি, তাঁদের মিছিলে বিপুল সংখ্যক কৃষক-আদিবাসীর উপস্থিতি সরকারকে নড়ে বসতে বাধ্য করেছে। কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার বক্তব্য, বিজেপি সরকার ঋণ মকুব নিয়ে হইচই করেছে। কিন্তু কৃষকেরা কেন ঋণ শোধ করতে পারছেন না, তার জবাব খোঁজার চেষ্টা করেনি। কৃষক নেতৃত্বের বক্তব্য, ফসলের ন্যূনতম দাম হিসেবে চাষের খরচের দেড় গুণ অর্থ দেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। কিন্তু চাষের পুরো খরচ কী, তা নিয়ে তিন ধরনের মত রয়েছে। প্রথম মত অনুযায়ী, কেবল চাষ করার খরচ। দ্বিতীয় মত হল, চাষ করা ও কৃষকের পরিবারের অন্যদের শ্রমদানের খরচ। তৃতীয় মত, ওই দুই খরচের সঙ্গে যোগ করতে হবে ভূমিহীন কৃষকের জমি নেওয়ার খরচ। কৃষক নেতাদের মতে, এই তৃতীয় মত অনুযায়ীই চাষের খরচের সংজ্ঞা স্থির করা উচিত। সেই খরচের দেড় গুণ অর্থ পেলে তবেই কৃষকের পক্ষে ঋণের জাল থেকে বেরনো সম্ভব। গত সপ্তাহে চাষের খরচের সংজ্ঞা স্থির করার কাজ শুরু করেছে নীতি আয়োগ। কৃষক আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রও যে নড়েচড়ে বসেছে, এটা তারই প্রমাণ বলে মত রাজনীতিকদের।
আজ বিক্ষোভকারী কৃষকদের সুরে সুর মেলাতে দেখা গিয়েছে অনেক নেতাকেই। ওই আন্দোলনকে সমর্থন করেছে শিবসেনা, এনসিপি-র মতো দল। আজ সকালে কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য।
অন্য দিকে নাসিকের এক সভায় কেন্দ্র ও রাজ্যের কৃষক-বিরোধী সরকারকে ছুড়ে ফেলার ডাক দিয়েছেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। আলোচনা শুরু হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরেও। আজ নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ প্রধান ভাইয়াজি জোশী বলেন, ‘‘কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কোনও সরকার উদাসীন থাকতে পারে না।’’
ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা মানছেন, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে কৃষক আন্দোলন শুভ সঙ্কেত নয়। আর বামপন্থী নেতাদের একাংশের মতে, কার সঙ্গে জোট হবে, তা নিয়ে বিতর্কে জড়ান সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু সঠিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুললে যে অনেকেই পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়, তা প্রমাণ করেছে মহারাষ্ট্রও।