শেষমেশ কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হল কেন্দ্র। শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর জানান, সরকার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। সেই সঙ্গে আন্দোলন তুলে নেওয়ার আর্জিও জানালেন কৃষকদের কাছে। তোমর বলেন, “সরকার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সব সময় রাজি।আগামী ৩ ডিসেম্বর কৃষক সংগঠনগুলিকে আর এক দফা আলোচনায় আহ্বান জানিয়েছি। কৃষকদের কাছে আর্জি, কোভিড পরিস্থিতি এবং ঠান্ডার কথা ভেবে আন্দোলন তুলে নিন।”
কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পঞ্জাব থেকে মিছিল করে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছিলেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরেই হরিয়ানার পুলিশ বিভিন্ন ভাবে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে বিক্ষোভরত কৃষকদের। সেই চেষ্টা আরও মরিয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত থেকে। প্রবল ঠান্ডার মধ্যেই হরিয়ানার সোনপতে রাত ১১টার দিকে কৃষকদের উপর জলকামান চালায় পুলিশ। উদ্দেশ্য একটাই, কৃষকদের দিল্লি ঢুকতে বাধা দেওয়া। শুক্রবার সকাল থেকেই দিল্লির সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় দেখা যায় বৃহস্পতিবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কৃষকরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের আটকাতে নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে পুলিশ।
সকাল থেকে শক্তি প্রয়োগ করার পর অবশেষে শুক্রবার দুপুরে সংঘর্ষের পথ থেকে সরে এল পুলিশ। বড় জয় পেলেন কৃষি বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী কৃষকরা। তাঁদের দিল্লিতে ঢুকতে অনুমতি দিল পুলিশ। নয়াদিল্লির বুরারি এলাকায় নিরঙ্করী সমাগম মাঠে প্রতিবাদ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু কৃষকরা বুরারির নিরঙ্করী ময়দানে প্রতিবাদে বসতে অস্বীকার করেন। তাঁরা সিঙ্গু সীমানাতেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
দিল্লিতে কৃষকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। তিনি টুইট করেন, ‘কৃষকদের প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত কেন্দ্রের এবং একটা সমাধানের রাস্তা বার করা উচিত।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই সোনপতে পৌঁছে গিয়েছিল ২০০-র বেশি কৃষকের একটি দল। রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়েই তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিল। পুলিশও ব্যারিকেড বানিয়ে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে তৈরি ছিল। রাত ৯টার দিকে সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়। কৃষকরা পুলিশকে ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে। পিছিয়ে যেতে রাজি হয়নি কৃষকরাও। ইতিমধ্যেই রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কনকনানি ঠান্ডা। তার মধ্যেই প্রতিবাদরত কৃষকদের ওই দলের উপর জলকামান ছোড়ে হরিয়ানা পুলিশ।
যদিও বৃহস্পতিবার সারা দিন সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও কৃষকদের আটকাতে পুরোপুরি সফল হয়নি হরিয়ানার বিজেপি সরকার। সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং অল ইন্ডিয়া কিসান সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দিল্লি ঢোকার জন্য ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার কৃষক পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার বিভিন্ন এলাকায়। শুক্রবার দিল্লি ঢোকার জন্য পুরোমাত্রায় তৈরি তাঁরাও।
পাশাপাশি বিক্ষোভরত কৃষকদের দিল্লিতে ঢোকা আটকাতে তৈরি রয়েছে প্রশাসনও। বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের দিল্লি ঢোকার আর্জি করোনা অতিমারির দোহাই দিয়ে ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব বলেছেন, “কোভিড-১৯ নির্দেশিকার জন্য রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয়। আমরা অনুরোধ খারিজ করেছি। দিল্লি সীমান্তে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জোর করে ঢোকার চেষ্টা বাধা দেওয়া হবে।’’ এরই অঙ্গ হিসাবে ২৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, চিল্লা সীমান্ত, তিকরি সীমান্ত, বাহাদুরগড় সীমান্ত, ফরিদাবাদ সীমান্ত, কালিন্দী সীমান্ত, সিংঘু সীমান্তে ব্যারিকেড গড়ে দিল্লি পুলিশ।
পুলিশের বাধা উড়িয়ে বিক্ষোভরত কৃষকরা কী ভাবে দিল্লি ঢোকেন আর বিক্ষোভে অনড় কৃষকদের রুখতে পুলিশ কী করে তার দিকে আজ নজর থাকবে সারা দেশের।
• দিল্লি-গুরুগ্রাম সীমানায় সমস্ত যানবাহনে তল্লাশি পুলিশেের। ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
• দিল্লির বুরারির নিরঙ্করী ময়দানে কৃষকদের প্রতিবাদের অনুমতি দেয় পুলিশ। কিন্তু সেখানে যেতে রাজি হচ্ছেন না কৃষকরা। তাঁরা সিঙ্গু সীমানাতেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।
• দিল্লির সিংঘু সীমান্তে বিক্ষোভরত কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ।
• দিল্লি- বাহাদুরপুর হাইওয়েতে তিকরি সীমান্তের কাছে লরি দিয়ে রাস্তা আটকেছিল পুলিশ। বিক্ষোভরত কৃষকরা ট্রাক্টর দিয়ে সেই লরি রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করে।পুলিশ বাধা দিলে হয় ধস্তাধ্বস্তি। এর পরই জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস চালায় পুলিশ। সেখানে কৃষকদের হঠাতে লাঠিচার্জ করা হয়েছে।
• এই বিক্ষোভের জেরে দিল্লি-গুরুগ্রামে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় গাড়ির উপর নজরদারি চালাচ্ছেন সিআরপিএফ জওয়ানরা।
• দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনগুলি বন্ধ করে দিয়েছে।
• বিক্ষোভরত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কেন্দ্রকে আর্জি জানালেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ।
• দিল্লি উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য শুক্রবারও পঞ্জাবের সীমানা পেরিয়ে হরিয়ানায় ঢোকার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। হরিয়ানা পঞ্জাব সীমানায় অম্বালার কাছে শাম্ভুতে জড়ো হয়েছেন প্রচুর সংখ্যক কৃষক। একই ছবি ধরা পড়েছে সিরসাতেও। সেখানে কৃষকদের মিছিলে মহিলাদের উপস্থিতি নজর কাড়ছে।
• শাম্ভু সীমানায় কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে ইতিমধ্যেই জলকামান দাগাচ্ছে পুলিশ। ছোড়া হচ্ছে জলকামানও।
• কৃষকদের বিক্ষোভকে সমর্থন জানাতে পানিপথ পৌঁছলেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা।
• মথুরাতে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ কৃষকদের
• দিল্লিতে ঢুকতে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি কৃষক নেতাদের। রামলীলা ময়দানে আলোচনার প্রস্তাব।
• ৯টি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেলে রূপান্তরিত করার জন্য দিল্লি সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। তা খারিজ করল দিল্লি সরকার।
• কিসান সংঘর্ষ সমিতির কনভেনর মনদীপ নাথওয়ান জানিয়েছেন দিল্লির তিকরি সীমানা দিয়ে প্রায় ৫ হাজার কৃষক দিল্লিতে ঢুকেছেন।
• সিংঘু সীমানায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেন কৃষকরা
• নয়াদিল্লির বুরারি এলাকায় নিরঙ্করী সমাগম মাঠে প্রতিবাদ করার অনুমতি দিল পুলিশ। দিল্লির পুলিশ কমিশনার কৃষকদের কাছে অনুরোধ করেছেন শৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে।
• কেন্দ্রের এই সিন্ধান্তকে স্বাগত পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর। তবে কৃষকদের প্রতি হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টার সরকারের আচরণের প্রবল সমালোচনা করেছেন।