নভজ্যোত সিংহ সিধু
গত বৃহস্পতিবারই সবে মন্ত্রী হিসেবে রাজনীতির ময়দানে নতুন ইনিংস শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু তাতেই প্রশ্নের মুখে নভজ্যোত সিংহ সিধুর টিভি-কেরিয়ার! কেউ বলছেন, এ বারে সে সব ছাড়তে হবে। সিধুর সাফ জবাব, তাঁর টিভির অনুষ্ঠান না করার কোনও কারণই নেই। রাজনীতির পাশাপাশি টিভি শো-ও চালিয়ে যাবেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহের এটা নাপসন্দ বলেই রাজনৈতিক সূত্রের ইঙ্গিত। যদিও সিধুকে সরাসরি বারণ করে দেওয়ার পথেও হাঁটছেন না তিনি। তাতে নিজেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন ৭৫ বছর বয়সি ক্যাপ্টেন। মুখ্যমন্ত্রী তাই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অতুল নন্দার কাছে আইনি পরামর্শ চেয়েছেন এ ব্যাপারে। ক্যাপ্টেনের কথায়, ‘‘আইন কী বলে আমি জানি না। যা-ই বলুক সিধুকে জানাবো।’’
ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে আসার পরেও সিধু ধারাভাষ্য দেওয়ার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। মুখ দেখিয়েছেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে। কখনও রিয়েলিটি শোয়ে অংশ নিয়ে দিন কাটিয়েছেন টিভি ক্যামেরার সামনে। এই সবের পাশাপাশি বিভিন্ন কমেডি শোয়ে অংশ নিয়ে আসছেন সেই ২০০৭ থেকে। কখনও বিচারক হিসেবে। কখনও বা অতিথি হিসেবে। গত বছর থেকে তিনি কপিল শর্মার শোয়ের স্থায়ী অতিথি। সাংসদ হয়েও এই সব করা নিয়ে এত দিন তেমন বাধার মুখে পড়তে হয়নি। এখন মন্ত্রী হতেই তাঁর টিভি-কেরিয়ার নিয়ে আইনি প্রশ্ন ওঠায় সিধুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ওই টিভি শো করা সত্ত্বেও মানুষ পাঁচ বার আমাকে নির্বাচিত করেছেন। তো এর পরেও সেটা বন্ধ করে দেব কেন?’’
ব্যাট চালানোয় বা বাক্যবাণে— সিধু বরাবরই নিজের মতো। রাজনীতিতেও লড়েছেন পিচ কামড়ে। প্রথম বার বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়েছেন অমৃতসরের। পরের বার দলের টিকিট না পেয়েও কংগ্রেসকে হারিয়েছেন অমৃতসর থেকে। অমৃতসর থেকে দূরে রাখতে বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠালেও মাস তিনেকের মধ্যেই সাংসদ পদ ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তিনি। এ বারের বিধানসভা ভোটে জিতেছেন সেই অমৃতসর থেকেই। হয়েছেন মন্ত্রী। প্রথমে জল্পনা ছিল, উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ পেতে পারেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি। বরং তাঁকে কম গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বার পেশার-পিচে বাউন্সার আসতেই ব্যাট চালাচ্ছেন সিধু। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘‘আমার তো প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ বাদলের মতো বালির খাদান, মদ বা পরিবহণের ব্যবসা নেই। এ ছাড়া, মন্ত্রী হওয়ার পরে অনেকেই তো তাঁর পেশার কাজ চালিয়ে যান। কেউ ওকালতি করেন, কেউ বিমান চালান। আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে, টিভি-শো করি বলে!’’
অনেকে মনে করছেন, টিভি কেরিয়ার চালিয়ে যেতেই সিধু যেচে কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক নিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের একটি অংশ ও বিরোধীদের কেউ কেউ বলছেন, আইনি দিকগুলি না হয় অ্যাডভোকেট জেনারেল খতিয়ে দেখবেন। প্রশ্নটা নীতিরও। সিধুর হাতে স্থানীয় প্রশাসন, সংগ্রহশালা ও জাদুঘর, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রকের ভার। এতগুলি মন্ত্রকের কাজ ফেলে মন্ত্রী যদি শ্যুটিং করতেই ব্যস্ত থাকেন, সেটা অনৈতিক বলেই দাবি করছেন তাঁরা। সিধুর স্ত্রী নভোজেত কউর পেশায় চিকিৎসক। নিজেও বিধায়ক ছিলেন এক সময়ে। স্বামীর পেশা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘দু’টো শোয়ের শ্যুটিং করতে সপ্তাহে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। তা-ও শুধু শনিবার রাতে।’’