চিচিং ফাঁক বলতেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। এ বার কি মিলবে কঙ্কালও? ডেরা সচ্চা সৌদা কর্তৃপক্ষ মেনেই নিয়েছেন, প্রচুর লাশ পোঁতা রয়েছে তাঁদের সিরসার সদর দফতরের আশ্রম চত্বরে।
জেসিবি মেশিন এনে মাটি খোঁড়া শুরু করেছে পুলিশ।
জোড়া ধর্ষণ কাণ্ডে ‘রকস্টার বাবা’ গুরমিত রাম রহিম সিংহ জেলে যাওয়ার পর থেকেই সিরসায় হানা দিতে মরিয়া ছিল পুলিশ। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে ৭০০ একরের ডেরা চত্বরে তল্লাশি নিয়ে গত কালই স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন কোর্ট কমিশনার একেএস পওয়ার। তাঁর উপস্থিতিতেই আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। যার ভিডিও তুলছে ৬০টিরও বেশি ক্যামেরা। তল্লাশি চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ এবং সরকারি নানা বিভাগের ১০টি দল। সঙ্গে ৪১ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী। বিকেলের পরে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রুরকি থেকে আসা ফরেন্সিক দলও।
এর আগে প্রাথমিক তল্লাশিতে প্রচুর কন্ডোম, গর্ভনিরোধক বড়ি এবং যৌন উত্তেজনা বর্ধক ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল গুরমিতের ডেরায়। তখনই অভিযোগ ওঠে, আশ্রমের বহু কর্মীকেই খুন করে এখানেই মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। গত কাল ‘সচ কহুঁ’ পত্রিকায় কার্যত তা-ই স্বীকার করে নিয়েছেন ডেরার মুখপাত্র। তবে খুন নয়, অন্য তত্ত্ব খাড়া করছেন ‘বাবা’র ডান হাত। তাঁর দাবি, মৃত্যুর পরে অনেকেই ডেরার মাটিতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তাই এই ব্যবস্থা। যেখানে যেখানে মৃতদেহ পুঁতে রাখা আছে, তার উপরে একটি করে চারাগাছও লাগানো হয়েছে। আশ্রম চত্বরের প্রতিটি গাছেই তাই সন্দিগ্ধ দৃষ্টি পুলিশের।
গুরমিত দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিনে তাঁর ভক্তরা আগুন লাগিয়েছিল একাধিক চ্যানেলের ওবি ভ্যানে। আজ ডেরা চত্বরেও পাওয়া গিয়েছে তাদের নিজস্ব একটি ওবি ভ্যান। আর একটি বিলাসবহুল কালো গাড়ি, যার কোনও নম্বর প্লেট নেই! এমন অনিয়মের প্রমাণ আরও মিলেছে। একটা ঘরে পাওয়া গেল প্রচুর ওষুধ। কীসের ওষুধ? বোঝা গেল না— লেবেল নেই যে! মিলল ১২০০টা নতুন নোট। কিন্তু বাতিল পাঁচশো-হাজারের ৭০০০টা নোট এখনও কেন পড়ে ডেরায়! গুরমিতের প্রাসাদ থেকে পুলিশ আজ পেয়েছে ১৫০০ জোড়া জুতো, ৩ হাজারেরও বেশি ডিজাইনার জামাকাপড়! বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অজস্র ল্যাপটপ, হার্ড ড্রাইভ। উদ্ধারও করা হয়েছে দুই নাবালিকাকেও।
তল্লাশির সময়ে জেলায় মোতায়েন রয়েছেন ৫ হাজার নিরাপত্তা কর্মী। ডেরা সদর দফতরের ঠিক বাইরেই রয়েছে ৯টি ডগ স্কোয়াড। রয়েছে বম্ব স্কোয়াড, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্সও। জারি রয়েছে কার্ফু। সূত্রের খবর, সিরসায় কম-বেশি ৯ হাজার লাইসেন্স-প্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। যার মধ্যে হাজার আটেক এরই মধ্যে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সন্ধান চলছে ডেরা-সমর্থকদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিরসায় যে কোনও মোবাইল থেকে শুধুমাত্র ফোনটাই করা যাবে। এসএমএস, মোবাইল ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড— সব বন্ধ।