নোটবন্দির সময় ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে সেই দীর্ঘ লাইন। ছবি: সংগৃহীত
কালো টাকা, জাল টাকা ও সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্য জোগানো অর্থে রাশ টানতে এক বছর আগে নোটবন্দি ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত বছরের ৮ নভেম্বর সেই অভিযান আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হওয়ার পর তা কতটা সফল হয়েছে এখনও পর্যন্ত তা খতিয়ে দেখার সময় এসে গিয়েছে। সত্যি সত্যিই কি কেন্দ্রীয় সরকার তার ঘোষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে? উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা? বাজেয়াপ্ত করা গিয়েছে জাল টাকা প্রচুর পরিমাণে? নোটবন্দির ফলে কি সত্যি সত্যিই সন্ত্রাসবাদী ও নাশকতামূলক কাজকর্মে অর্থের জোগান কমেছে? আর তার ফলে কি কমেছে দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সংখ্যা? একটু খতিয়ে দেখা যাক।
নোটবন্দির ঘোষণার সময় বাজারে চালু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের মোট মূল্য ছিল ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। সেই সময় সুপ্রিম কোর্টে তদানীন্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি জানিয়েছিলেন, ওই সরকারি অভিযানের ফলে ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার ২৫ শতাংশ বা ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্কে ফিরবে না, কালো টাকা বলে। কিন্তু সরকারের সেই হিসেব মেলেনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, নোটবন্দির ফলে মাত্র ১৫ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা সরকারের ঘরে ফেরেনি। যা সাকুল্যে ১ শতাংশ। বাকি টাকার পুরোটাই ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে। তা হলে, নোটবন্দি অভিযান চালিয়ে কালো টাকার হালহদিশ সত্যি সত্যিই জানা সম্ভব হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত জুলাইয়ে সংসদে তাঁর ভাষণে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন, নোটবন্দির ফলে দেশে ১১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোটের হদিশ মিলেছে।কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেবে ওই সময়ে দেশে ৪৩ কোটি টাকা মূল্যের জাল নোটের হদিশ মিলেছে। যার মানে, যত জাল নোটের হদিশ মিলেছে বলে সংসদে জানিয়েছিলেন জেটলি, তার ৪ গুণ জাল নোটের সন্ধান মিলেছে নোটবন্দিতে। অন্তত এমনটাই তথ্য রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন- আপনি ‘নক্ষত্র’, আপনি ‘আমার ক্যাপ্টেন’: পিঠ চাপড়াচাপড়ি বিজেপিতে
আরও পড়ুন- কালো টাকার নথিতে চাপে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দি অভিযানের আরও একটি ঘোষিত লক্ষ্য ছিল দেশে সন্ত্রাসবাদী ও নাশকতামূলক কাজকর্মে অর্থের জোগান বন্ধ করা। যদি সত্যি সত্যিই তা হয়ে থাকে তা হলে দেশে নোটবন্দির সময় সন্ত্রাসবাদী ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ এতটা বাড়ল কী ভাবে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, নোটবন্দির সময় জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসের ঘটনার হার বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। আড়াই হাজার শতাংশ বেড়েছে ওই রাজ্যে সন্ত্রাসের জেরে সাধারণ নাগরিকদের মূত্যুর হার। আর ২ শতাংশ বেড়েছে নিরাপত্তাকর্মীদের মৃত্যুর হার। তা হলে, নোটবন্দি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসবাদী ও নাশতামূলক কার্যকলাপ বন্ধে কাজের কাজ কী হল?
মঙ্গলবার তাঁর ব্লগে অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি লিখেছেন, ‘‘নোটবন্দির ফলে কাশ্মীরে নিরাপত্তাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়ার ঘটনা অনেকটাই কমেছে, কমেছে বিক্ষোভ, সমাবেশের ঘটনাও। জাল টাকা বা কালো টাকার অভাবে দেশে নকশালপন্থীদের কার্যকলাপেও ভাটা পড়েছে।’’
যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য জানাচ্ছে, নোটবন্দির সময়ে নকশালপন্থীদের হানাদারি বা তার জেরে সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা ৪৫ শতাংশ কমলেও, সেই সময় নিরাপত্তকর্মীদের মৃত্যুর হার ৮২ শতাংশ বেড়েছে।