নয়ডার যমজ অট্টালিকা ভাঙার প্রস্তুতি তুঙ্গে। ছবি: পিটিআই।
মোট নির্মাণ এলাকা সাড়ে সাত লাখ বর্গ ফুট। যমজ অট্টালিকার প্রতি বর্গফুট তৈরিতে খরচ হয়েছে ৯৩৩ টাকা। যতটা নির্মাণ হয়েছে, তার খরচ পড়েছে ৭০ কোটি টাকা।
দু’টি অট্টালিকার একটির নাম অ্যাপেক্স। যার উচ্চতা ১০৩ মিটার। ৩২ তলা। অন্য অট্টালিকার নাম সিয়েন। উচ্চতা ৯৭ মিটার। ২৯ তলা। নয়ডার ৯৩-এ সেক্টরের এই যমজ অট্টালিকার প্রতি বর্গফুট ভাঙতে খরচ পড়ছে ২৬৭ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হবে ২০ কোটি টাকা।
যমজ অট্টালিকা ভাঙতে যে ২০ কোটি টাকা খরচ হবে, তার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা দিচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থা সুপারটেক। বাকি ১৫ কোটি টাকা তোলা হবে অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ বিক্রি করে। এই অট্টালিকা দু’টি ভাঙতে ‘ওয়াটারফল ইমপ্লোসন’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। অর্থাৎ, বিস্ফোরণের পর ধ্বংসাবশেষ বাইরের দিকে ছিটকে না বেরিয়ে চৌহদ্দির মধ্যেই পড়ে। আর এর জন্য যমজ অট্টালিকাকে ঘিরে চার স্তরীয় লোহার খাঁচা এবং দু’টি স্তরে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। অট্টালিকা ভাঙার সময় যে কম্পন সৃষ্টি হবে, সেই কম্পনের মাত্রা কম করতে ‘ইমপ্যাক্ট কুশন’ তৈরি করা হয়েছে।
যমজ অট্টালিকা ভাঙার পর ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ হবে ৮০ হাজার টন। নয়ডার সিইও ঋতু মাহেশ্বরী জানিয়েছেন, ৮০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ৫০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ ওই জায়গাতেই রাখা হবে। বাকি ৩০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ সেক্টর ৮০-তে ডিমোলিশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে গিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে নষ্ট করে দেওয়া হবে।
মাহেশ্বরীর কথায়, “বেশির ভাগ ধ্বংসাবশেষ অট্টালিকার বেসমেন্ট ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হবে। বাকি ধ্বংসাবশেষ ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হবে। এর জন্য এক হাজার ট্রাক কাজে লাগানো হবে। মোট ৯০ দিন লাগবে এই ধ্বংসাবশেষ সরাতে।
রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে নয়ডার যমজ অট্টালিকা। এই অট্টালিকা গুঁড়িয়ে দিতে হরিয়ানা থেকে আনা হয়েছে ৩৭০০ কেজি বিস্ফোরক। মাত্র ন’সেকেন্ডে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হবে টুইন টাওয়ার।
যমজ অট্টালিকাকে ঘিরে বিতর্ক অনেক পুরনো। কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা এই যমজ অট্টালিকা কেন ভেঙে ফেলা হচ্ছে? ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (এনবিসি) বলছে, একটি অট্টালিকা থেকে আর একটির দূরত্ব কমপক্ষে ১৬ মিটার হওয়ার উচিত। কিন্তু নয়ডার যমজ অট্টালিকার ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। দু’টি অট্টালিকার মধ্যে দূরত্ব ন’মিটারেরও কম। ২০১২-তে বিষয়টি ইলাহাবাদ হাই কোর্টে ওঠে। ২০১৪ সালে হাই কোর্ট জানায়, এই নির্মাণ অবৈধ। অতএব ভেঙে ফেলতে হবে। শুধু তাই নয়, এই দুই অট্টালিকায় যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাঁদের ১৪ শতাংশ সুদসমেত টাকা ফেরত দিতে হবে। এর পরই মামলাটি পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টে। ২০২১-এ সুপ্রিম কোর্ট ইলাহাবাদ হাই কোর্টের রায়কে বহাল রাখে। ২০২২-এর ১২ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ২৮ অগস্টে যমজ অট্টালিকা ভেঙে ফেলতে হবে।