কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্যের প্রতিবাদে শিলচরে ধর্না। শনিবার। ছবি: স্বপন রায়।
রাজেন গোঁহাইকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের দাবি করল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। সংগঠনের কাছাড় জেলা কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে এই মর্মে আজ একটি স্মারকপত্রও পাঠানো হয়। একই দাবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও। প্রতিলিপি দেওয়া হয় রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল পুরোহিত ও মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে। সব ক’টি স্মারকলিপি আজ বরাক বঙ্গের কর্মকর্তারা কাছাড়ের জেলা উন্নয়ন কমিশনার মধুমিতা চৌধুরীর হাতে তুলে দেন।
অসমে অসমিয়াই হবে একমাত্র সরকারি ভাষা—এই মন্তব্য করে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই বরাক থেকে বাংলা ছাঁটাইয়ের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের। তার প্রতিবাদে আজ সকাল ১১টা থেকে শিলচরে শহিদ ক্ষুদিরামের মূর্তির পাদদেশে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন তাঁরা। সেখানে বরাক বঙ্গের কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, ভাষাশহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতি, বরাক ভ্যালি হিউম্যান প্রোটেকশন সোসাইটি-সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভাষণ দেন আশিস ভৌমিক, রাজীব কর, সুবীর কর, শরিফুজ্জামান লস্কর, শুভদীপ দত্ত, পরিতোষ দে, তৈমুর রাজা চৌধুরী, দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, সঞ্জিত দেবনাথ প্রমুখ।
তাঁরা বলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু দিন পর পর রাজেন গোঁহাই বাংলাভাষা ও বাঙালিদের নিয়ে আবোল তাবোল মন্তব্য করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ সবের পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। কারও ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে এড়িয়ে গেলে সামনে বিপদে পড়তে হবে। তাঁরা বলেন, ডিমাসা রাজত্বে বাংলাই ছিল প্রধান ভাষা। পরবর্তী সময়েও এই অঞ্চলে বাংলা ব্যবহারে সমস্যা হয়নি। প্রথম সংঘাত বাঁধে ১৯৬০ সালে। অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে ১১ জন তরুণ-তরুণী শহিদ হয়েছিলেন। এরপরই বরাকে বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এই স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা উপত্যকার মানুষ যে কোনও মূল্যে প্রতিরোধ করবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত। তিনি বলেন, এই সব কথা উঠে এসেছে তাঁদের স্মারকলিপিতেও। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় রাজেন গোঁহাইকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবিতে। তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণেরও আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। গৌতমবাবু বলেন, বাঙালি-বিরোধী মন্তব্যের জন্য তাঁরা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, হোজাইয়ের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব এবং হাইলাকান্দির এআইইউডিএফ বিধায়ক আনোয়ারুদ্দিনেরও সমালোচনা করেছেন।