ছবি: পিটিআই
জাত গণনা নিয়ে নীতীশ কুমারকে অবস্থান স্পষ্ট করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তেজস্বী যাদব। এর পরেই তেজস্বীর সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন নীতীশ। পৌনে এক ঘণ্টার সেই বৈঠকের পরে ঘোষণা হয়, রাজ্য সরকারই জাত গণনা করবে বিহারে। সে জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হবে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মে মাসের ১১ তারিখে নীতীশ ও তেজস্বীর ওই বৈঠকেই প্রথম জেডিইউ-আরজেডি-কংগ্রেস-বাম জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়। নীতীশ ও তেজস্বী দু’জনেরই মত ছিল, বিজেপি তাঁদের ওবিসি ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাচ্ছে। দলের ওবিসি নেতাদের তুলে এনে বিজেপি বিহারে জেডিইউ, আরজেডি— দুই ওবিসি ভোট নির্ভর দলকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে চাইছে। অথচ জাত গণনার দাবি মেনে নিতে রাজি নয় বিজেপি। কারণ জাত গণনা হলেই ওবিসি-দের আসল সংখ্যা বেরিয়ে পড়বে। ওবিসি-দের সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বলে অনুমান। তখন এখনকার ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের বদলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ওবিসি-দের জন্য আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি উঠবে। বিহারের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশেও এর ফলে বিপাকে পড়বে বিজেপি। এই অঙ্ক মেনেই নীতীশ ও তেজস্বী ফের জোট নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। যার পরিণতি, বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে ফের নীতীশের আরজেডি-র হাত ধরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিহারের রাজনীতিতে নতুন করে ‘মণ্ডল বনাম কমণ্ডলু’-র রাজনীতি শুরু হল। বিজেপি এত দিন উত্তরপ্রদেশের মতো বিহারেও উচ্চবর্ণের সঙ্গে ওবিসি ভোট যোগ করে সাফল্য পেয়েছে। এ বার যাদব, কুর্মি-সহ গোটা ওবিসি ভোটব্যাঙ্ক নীতীশ ও তেজস্বীর সঙ্গে এক দিকে চলে যেতে পারে। কংগ্রেস জোটে থাকায় বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটও কিছুটা কমবে। ফলে বিজেপিকে আবার হিন্দুত্বের উপরেই ভরসা করতে হবে। ২০১৯-এর লোকসভায় বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৭টি আসন জিতেছিল। জেডিইউ-বিজেপি আরজেডি-কংগ্রেসের ‘মহাজোট’-এর নেতাদের দাবি, এই জাতপাতের সমীকরণ বজায় থাকলে ২০২৪-এ বিহারে বিজেপিকে শূন্য থেকে লড়াই শুরু করতে হবে।
মহাজোট সূত্রের খবর, এই জাতপাতের লড়াইকে আরও তুঙ্গে নিয়ে যেতে মন্ত্রিসভা গঠন হয়ে গেলেই জাত গণনার ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে। গত বছর নীতীশ ও তেজস্বীর নেতৃত্বে বিহারের রাজনৈতিক দলগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দরবার করে জাত গণনার দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র সে পথে হাঁটতে নারাজ। মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, জাত গণনার কাজে অনেক প্রশাসনিক সমস্যা। ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনাও প্রচুর। এই কারণেই ২০১১-এ মনমোহন সিংহের জমানায় আর্থ-সামাজিক জাত গণনা হলেও তার ফল প্রকাশ হয়নি। নীতীশ অবশ্য গত ১ জুন পটনায় সর্বদলীয় বৈঠক করে বিহারে জাত গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নতুন সরকার এ বার সে দিকে পদক্ষেপ করবে।
এতে বিজেপি নেতৃত্বও বিপদের আশঙ্কা দেখছেন। বিহার-উত্তরপ্রদেশে এসপি-আরজেডির ভোটব্যাঙ্ক যাদব, উত্তরপ্রদেশে আরএলডি, আইএনএলডি-র ভোটব্যাঙ্ক জাঠদের বাদ দিলে অন্যান্য ওবিসি-রা সংরক্ষণের সুবিধা পায়নি। বাকি ওবিসি-দের সমর্থন পেতে বিজেপি তাদের শ্রেণি বিভাজনের দরকার বলে সওয়াল করেছিল, যাতে সকলে সংরক্ষণের সুবিধা পায়। ২০১৭-এ এ জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি রোহিণীর নেতৃত্বে কমিশন তৈরি হয়। বিহার কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচন থেকে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সব ওবিসি-দেরই ভোট পেতে শুরু করেছে। ফলে বিজেপি নিজেই আর শ্রেণি বিভাজনে নারাজ। রোহিণী কমিশন না চাইলেও তার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। অন্য দিকে জাত গণনার পথেও বিজেপি হাঁটতে চাইছে না। কারণ ওবিসি-দের সংখ্যা জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ বলে জানা গেলে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের দাবিই উঠবে। তা মানতে গেলে বিদেপির মূল ভোটব্যাঙ্ক উচ্চবর্ণ বিদ্রোহ করবে। নীতীশ-তেজস্বী এখন বিজেপিকে ঠিক এই প্যাঁচেই ফেলতে চাইছেন।”